উত্তরবঙ্গে সাড়ম্বরে পালিত হল বুড়ির ঘর বা ভেরা ঘর পোড়ানো
মধুসূদন রায়:
রঙের উৎসবের আগের দিন অর্থাৎ দোল পূর্ণিমার আগের দিন সন্ধ্যায় পোড়ানো হয় বুড়ির ঘর , কেউ বলেন ভেরার ঘর , কোথাও ন্যাড়া পোড়ানো, কখনো হোলিকা দহন, কারোর কাছে চাঁচর । তবে নামের রকমফের থাকলেও আসলে এটি এক বহ্নি উৎসব। জানা গেছে উত্তর ও পশ্চিম ভারতে এই উৎসবটি প্রকারান্তরে হোলিকা দহন হিসাবে পরিচিত । যা উত্তরের রাজবংশী সমাজে ভেরা ছোবা বা বুড়ির ঘর পোড়ানো নামে পরিচিত । তবে বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে এই উৎসব । মূলত শুকনো কলার পাতা ,খড় , কাঁশ ঘাস, ডাল, কাঠ ,বাঁশ সহ নানান দাহ্য বস্তু দিয়ে তৈরি করা হয় এই ভেরার ঘর বা বুড়ির ঘর । প্রথমে শুকনো কলার পাতা বিছিয়ে দেওয়া হয় তারপর খড় ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং তারপর লম্বালম্বি বাঁশটি দিয়ে চারদিকে খড় দিয়ে পেঁচিয়ে শুকনো কলার পাতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। শুকনো কলার পাতা অনেকটা দড়ির মতো কাজ করে।
দোল পূর্ণিমার আগের দিন সন্ধ্যায় পুজো দিয়ে একটি উঁচু স্তম্ভ বানিয়ে তাতে হোলিকার প্রতীকী কুশপুত্তলিকায় অগ্নিসংযোগ করে হোলিকা দহন করা হয়। খোল কর্তাল সহযোগে পুজো দিয়ে সাত পাকে ঘোরা হয় বুড়ির ঘর বা ভেরার ঘরের চারপাশে । উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজবংশী সমাজে বুড়ির ঘর বা ভেরার ঘর পোড়ানোকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উন্মাদনা দেখা যায়। উপযুক্ত যায়গা ও সংস্কৃতির অভাবে শহরাঞ্চলে ভেরার ঘর পোড়ানো বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায় ।
উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজের মানুষদের ভেরা ঘর বা বুড়ির ঘর পোড়ানোর সময় চিৎকার করে বলে ওঠতে দেখা যায় ‘আজি হামার ভেরা ঘর ছুবা, কালি হামার দোল, পূর্ণিমার চাঁদ উঠিসে কও হরি বোল' । এভাবেই আগুনের তিব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে এই উচ্চারিত ধ্বনি ।
No comments:
Post a Comment