বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশের প্রশ্ন
- নীতীশ বিশ্বাস, সম্পাদক, সমাজ ভাষা গবেষক ও চিন্তাবিদ
প্রাক কথনঃ সকলেই জানেন পৃথিবীর সব কিছুই আপেক্ষিক। তাই ভারতে ৫০০বছরের একটা মসজিদকে কেন্দ্রকরে একটি কাল্পনিক ভাবনা যখন রূপান্তিরত হয় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের প্রায় অলঙ্ঘনীয় সিদ্ধান্তে, তখন একটি উপমহাদেশের প্রায় সকলে নানা কারণে তা মেনে নেন। সামান্য কয়েক জন মানুষ তার প্রসঙ্গে নানা দিক থেকে তাদের কিছু কথা, কিছু ব্যথা ব্যক্ত করেন- কি কি অমান্য হয়েছে তার মান্যতার জন্য।। আর মুখ্যতঃ বামপন্থীদের প্রতিবাদ ছাড়া তেমন উচ্চকন্ঠ প্রতিবাদ এদেশে কেউ মনে হয় জানান নি।
অন্য দিকে ভাঙ্গাবাংলার ফিকে-বাঙালিরা সারা ভারতে অনন্য হয়ে ওঠেন তাদের উদারতা নামক উদারময় রোগে আক্রান্ত হয়ে । কারণ ভারতে সব প্রদেশে সেই রাজ্যের প্রধান ভাষা বাস্তবত স্কুলস্তরে সর্বত্র আবশ্যিক হলেও এ রাজ্যের ৭০বছরের বিভিন্ন শাসনে মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রধান রাজ্য ভাষা আবশ্যিক কেউ করেন নি। এমন কি বাংলার দিদিও এই ২০১৭ সালে তা ঘোষণা করেও, আজ পর্যন্ত একটা সার্কুলারও প্রকাশ করার সাহস দেখাননি নি। অন্য দিকে বামপন্থী কেরল সরকার একেবারে এখন যিনি মুখ্য মন্ত্রী সেই কমরেড পিনারাজনের নেতৃত্বে মালয়ালম ভাষা রাজ্যের সমস্ত স্কুলে আবশ্যিক করে তাকে প্রয়োগও করেছেন।
আর দেখুন সারা ভারতে বাঙালি আজ সব দিক থেকেই কোন ঠাসা। সে রক্তাক্ত আসাম থেকে আত্ম বিভাজিত আন্দামানসহ সমস্ত রাজ্যে বাঙালি ও বাংলা ভাষা আক্রান্ত ও মুছে যাওয়ার মুখে ।অধিকাংশ রাজ্যে যে সব বাংলা স্কুল ছিল তা বন্ধ অথবা বই-পত্রের অভাবের নানা অজুহাত তুলে কেন্দ্রীয় সরকার ও সেই সেই রাজ্য সরকারের চক্রান্তে উঠে যাবার মুখে । অর্থাৎ বাঙালি , বাংলা ভাষা ও বঙ্গ সংস্কৃতি যখন ধুয়ে মুছে দেবার প্রায় শেষ ধাপে আমরা তখনও বাঙালি হিসেবে আমরা কি আকাশের তারা গুণে সময় কাটাবো ? না মাতৃভাষা ও মাতৃভাষীর জন্য কন্ঠ তুলব? আর -একাজ যদি প্রগতি্শীল ও বিজ্ঞান চিন্তার মানুষেরা না সমাধানের চেষ্টা করেন, তাহলে “তৃষ্ণার্ত মানুষ ময়লা জল পান করবে”,আর মরীচিকার গোলক-ধাঁধাঁয় পুড়ে মরবে ।ভারতের প্রায় বারো কোটি মানুষের এই অগ্নিদহন বন্ধ করতে তথা এই দেশ প্রেমিক দায় বদ্ধতায় এই আলোচনা সুবিবেচক ও মুক্তচিন্তক ভারত বাসীর সামনে উপস্থিত করছি। কোনভাবেই উগ্র জাত্যভিমানে নয় । অস্তিত্ত্ব রক্ষার আন্তঅরিক তাগিদে । কোন রাজ্য থেকে কাঊকে তাড়িয়ে অথবা বাড়িয়ে নয় ।আমাদের মহান দেশে সবাই স্ব স্ব ক্ষত্রে সুস্থ্য ভাবে থাকুন, বাঁচুন আর দেশকে বাঁচান-এই মায়ের বুকের স্নেহের উত্তাপ-ঋদ্ধ উচ্চারণে । আসামী-উগ্রতা অথবা দক্ষিণপন্থী ধর্মীর সাম্প্রদায়িকতার সেখানে স্থান নেই। আছে জাতীয় সংহতি ও সামাজিক সম্প্রীতির মহান ভারততীর্থের স্বপ্ন ।
রাষ্ট্র সমাজে রাজনীতিই সকল ক্ষমতার উৎসঃ সকলেই জানেন, যে কোন রাষ্ট্রের সব সিদ্ধান্তই গ্রহণ করে রাজনৈতিক ক্ষমতাধরেরা। তাই নানা রাজনৈতিক দলের এজেন্ডায় যদি স্বস্ব জাতিসত্তার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার বিষয়টি না থাকে তাহলে সে তো অনাথ শিশু হয়ে অযত্নে লালিত ও অপুষ্টিতে পালিত সৎমায়ের সন্তানের মত বাঁচবে। বয়স বাড়বে কিন্তু তার যথার্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ হবেনা। এসব সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা থাকে মূলত রাজনীতির কর্তাদের হাতে ।
বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশে মূল বাঁধা কি কি ?ঃ বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিসত্তা গড়ে ওঠার প্রধান বাধাগুলির প্রাথমিক কারণ হল পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দলগুলি তো অতো বাঙালি বাঙালি করতে পারে না । তাদের সব দলেরই দিল্লিস্থ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ আর জাতীয় সংহতির বিষয়টা ভাবতে হয়। শুধু তাই নয় ভারতের মত বহুভাষার দেশে অন্য রাজ্যগুলি (সে তামিল,তেলুগু, কর্ণাটকসহ দক্ষিণ ভারত থেকে গোবলয়ের আগ্রাসী হিন্দি রাজ্যগুলি) তাদের নিজের রাজ্যে তাদের অধিকার রক্ষায় দৃঢ় থাকলেও বাঙালিরা তা করে কি ভাবে(?!)।--সেই,‘পাছে লোকে কিছু বলে”র মতো পশ্চাৎপদতা বা অতি প্রগতিশীলতা তাদের পেছন-টেনে ধরে। প্রসঙ্গত এখানে স্মরণ করাতে চাই বাংলা দেশের ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন ও তার পিছনে কার্যকর বাঙালির জাতিসত্তার বিকাশ ও প্রতিরোধ আন্দোলনের বিষয়টি। ওখানের প্রায় সব মুসলমান কয়েক প্রজন্মের পুর্বের নিম্নহিন্দু।(*১)।তারা কলকাতার বাবু-শ্রেণীর মতো অতো বুদ্ধিমান নয়(?), তাই তাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বর্ণ লাঞ্ছিত,আত্ম বিদীর্ণ হিন্দুদের মত আত্মবিভাজন সে অর্থে ছিলো না । অর্থাৎ এখানের এলিট হিন্দুদের কাছে,“বাংলা ‘আমাদের ঝি-চাকরের ভাষা’ তার জন্য আন্দোলন না করলেও চলবে । আমাদের ছেলে মেয়েরা তো ইংরেজি জানে ।” -এই বোধে জারিত হয়ে বাম জামানার ঘোষিত সঠিক ভাষানীতিও বাঙালির আত্ম-তঞ্চকতায় মুখথুবড়ে পড়ল। ফলে বাঙালির জাতিসত্তা যা রবীন্দ্রনাথের উজ্জ্বল উচ্চারণে ধ্বনিত “বাংলার মাটি,বাংলার জল”—আমরা আর উচ্চারণের সাহস দেখাতে পারলাম না । তাই আজ অহিন্দিভাষার উপর কেন্দ্রের তথা হিন্দির আক্রমণের দিনে আমরা তামিলনাড়ু–কর্ণাটকের দিকে তাকিয়ে থাকি। আজও বাংলার ছেলে মেয়েরা যে ইংরেজিতে পরীক্ষাদিয়ে দু-একটা চাকরি পায় সে-ঐ দক্ষিণীদের আন্দোলনের ফলে ।যদিও সে বোধ অধিকাংশ বাঙালির বোধিতে পৌঁছয় না।
আসাম কথা অথবা আপন কথাঃঃ ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারির আন্দোলন বাংলা ভাষার হলেও সে অন্য দেশের ঘটনা।তাও আমরা তাকে যতটুকু আপন ভেবে পালন করি বা করেছি; তা করিনি ১৯৬১-র ১৯শে মের ক্ষেত্রে ।কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ১৯শে মে পালন করতে গিয়ে কলকাতার বিশিষ্ট বক্তাদের সে প্রসঙ্গে বই দিয়ে আসতে হত। কারন শিলচরের বাঙালিদের চেয়ে তারা শেষের কবিতার শিলং-এর কথাই বেশি জানতেন। এমনকি দীর্ঘদিনের দাংগা বিধ্বস্ত আসামের উদ্বাস্তুদের সমস্যা প্রায় কিছুই তারা জানতেন না । প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা জরুরি আমরা প্রায়ই ভুলে থাকি যে ১৯৫৬সালের ১লা নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গে মানভূম ভাষা আন্দোলন দিবসের কথা। তার কথা আজও আমাদের চেতনায় জায়গা করে নিতে পারে নি। কারণ সেও ছিলো রাঢ় বাংলার মাটির মানুষের তথা নাঙ্গা-পায়ের মানুষের আন্দোলন। যাক আজকের জ্বলন্ত আসামের কথায় ফিরে আসি। আসামের এন আর সি-র প্রথম তালিকা (৩১-১২-১৭)প্রকাশের পরে আসাম নিয়ে আমরা সর্ব ভারতীয় বাংলা ভাষা মঞ্চের পক্ষথেকে কলকাতায় ১২ই জানুয়ারি,২০১৮, একটি সভায় বুদ্ধিজীবীদের ডাকতে গিয়ে সেই আসাম সম্পর্কে কম-জানার সমস্যায় পড়েছিলাম । আসলে বাংলার বামপন্থী নেতারাই মূলত রাজনীতি নিয়ে বেশি পড়াশুনা করেন। কিন্তু তারা আবার হোয়াং হো নদীর কান্না, ভোলগা পাড়ের কথা অথবা টেমস নদীপাড়ের প্রেমের খবর যতটুকু জানেন, ভালোকরে জানতেন না প্রতিবেশি রাজ্যের তথা আসাম বা ওড়িশার নদীগুলির প্রবাহিত ধারার কথা। আর তার পাড়ে বাঙালি বসতি থাকলেও তার কথাও জানেন-না। কোন স্তরে ভূগোল বা সমাজ বিজ্ঞানের পাঠ্য তালিকায় এসব বিষয় থাকলে তা পথ্যের মতো গলাধঃকরণ করলেও আত্মস্থ করেনি; কাজে লাগবেনা বলে।সকলেই জানেন,-নাজানা মানুষ সঙ্গে আর নাচেনা প্রকৃতির প্রতি প্রেম হয় না । তাই এ দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আসামের মতো পাশের বাড়ির সঙ্গে যখন এই অবস্থা তখন সারা ভারতে ছুঁড়েফেলা, ছড়িয়ে থাকা উদ্বাস্তু বাঙালির তো কথাই নেই। তাদের কথা উঠলে কলকাতার বাবুরা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে বলেন, “ওরা তো আমাদের ঝি-মায়ের সন্তান”। হ্যাঁ এক-আধটু ভালোবাসা ছিল এককালে কিন্তু তাদের বিপদের পাশে দাঁড়ানো বা তাদের জন্য কন্ঠতোলা ?-“না। ও-ধরণের সংস্কৃতি শিখদের আছে, ঐ লালুপ্রসাদ যাদবদের আছে,- আমাদের নেই”। আমরা প্যালেস্টাইন, ভিয়েতনাম, লাওস জানি, আন্দামান, মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ,এমন কি শহুরে-বাঙালি ছাড়া বিহারের উদ্বাস্তু অঞ্চলকেও জানি না। এই স্বার্থপরতায় ডুবে আছে পশ্চিমবঙ্গের এলিটশ্রেণি এবং তার রাজনৈতিক দলগুলির ইংরেজি জানা নেতারা। ফলে ভারতের নানা প্রান্তে বিপন্ন বাঙালির জন্যও আমরা ছুটে যাই না। তাদের ক্ষেত্রে হরণ হওয়া মানবাধিকারের কথাও বলিনা। সাম্প্রতিক অতীতে আমি দেখেছি সুনামী বিধ্বস্ত আন্দামানে আমার জানা কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা রিলিফ দিতে গিয়েছিলেন। এই পর্যন্ত । তারপর আর তেমন কোন খবর নেই। এমন কি সেখানে ২০১৯শের নির্বাচনে যে শেষ পর্যন্ত বাম সমর্থিত কংগ্রেস-প্রার্থী জিতেছেন সে খবরও ভুলে বিজেপি বলে প্রকাশিত হয়েছে বাংলার কয়েকটি কাগজে। আমরা ৬৪% বাঙালি অধ্যুষিত আন্দামান বিষয়ে যদি এতোটাই উপেক্ষা দেখাই। তা হলে আর ৩০-৪০ হাজার উদ্বাস্তুর কর্ণাটক, বেশ কয়েক লক্ষের দন্ডকারণ্য(তিন রাজ্য জুড়ে), লাখ খানেকের রাজস্থান, ১২লাখ বাঙালির বিহার, ১৫লাখের উত্তরাখন্ড, ১২লাখ উদ্বাস্তুর উত্তরপ্রদেশ নিয়ে আর কি বলবো। ভালোবাসা আর আত্মিক-আন্তরিকতা ভিত্তিক যে বাঙালি জাতিসত্তার বন্ধন তা গড়ে ওঠেনি।আর সেখানে আমাদের তথাকথিত প্রগতিশীলতা অনেক ক্ষেত্রে বাধাও সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা মাকে মা-বলে ডাকতে ভুলে গেছি, তাই আজ মায়ের অস্তিত্বের সঙ্গে আমার অস্তিত্বও যখন আক্রান্ত তখন আর যেন মায়ের পাশে দাঁড়াতে মনের জোর পাচ্ছিনা। কন্ঠের আওয়াজও বেরুচ্ছে না। তাতে যদি বাংলাভাষা নদী মৃতস্রোতা হয়েও যায় তবু তার আন্তর্জাতিক ও জাতীয়তাবাদী সন্তানেরা সঠিক ভাষানীতির সন্ধানের তাত্ত্বিকতার জঙ্গলে অজস্র বিবেচনার আড়ম্বরের মধ্যে হাতড়াটে হাতড়াতে বেচারা ভাষা পাখিটির মৃত্যু হ’ল কিনা সে খবর আর রাখার সময় পায়না, আজও পাচ্ছে না। ট্রাজেডি আর কাকে বলে! আজ তাই মৃতকল্প মাকে সামনে নিয়ে আমাদের জাতিসত্তার বিষয়ে আত্ম সমালোচনার উচ্চারণ।বেদনার নীরব ক্রন্দন ।
সুপ্রিম কোর্টের রায় ও বাংলা ভাষা প্রসঙ্গ ঃ সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্ট একটি অভিনন্দন যোগ্য সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছে। এখন থেকে বিচারপতিদের রায় কেবল ইংরেজিতে নয় অন্যান্য জাতীয় ভাষায়ও পাওয়া যাবে। ভারতের মতো দেশে এটা সত্যিই এক মহান সিদ্ধান্ত। তবে ভারতের একচক্ষু-গণতন্ত্রের সংকীর্ণতার পরিচয় এখানেও আমরা দেখতে পেলাম। এই ঘোষণার সঙ্গে যে ভাষা গুলিতে এই আইনী অনুবাদ দেওয়া হবে বলে জানানো হয় তার মধ্যে ছিল না বাংলা । পঞ্চাশলাখ থেকে এক কোটি লোকের ভাষা যেখানে স্থান পেলো সেখানে কেন ভারতের ১২-১৪কোটি লোকের বাংলাভাষা স্থান পেলনা?- তা এক বিস্ময়। সকলেই জানেন বাংলাভাষা পৃথিবীর ৪র্থ ভাষা আর মাতৃভাষীর বিচারে ভারতের প্রথম ভাষা । সরকারি আনুকূল্যে হিন্দি প্রথম স্থানে উঠেছে একথা সত্য। তবে এর পেছনে আছে বহু ধরনের অন্যায় ও তঞ্চকতা । দেবনাগরি লিপি ব্যবহারকারী ও লিপিহীন ভাষা উপভাষা গুলিকে লোক-গননায় হিন্দির পেটে গিলিয়ে দিয়ে সে ভাষাকে পশ্চিমা শাসক শ্রেণি প্রথম স্থানে টেনে তুলে এনেছে। অন্যদিকে সকলেই জানেন- এশিয়ার প্রথম নোবেল পুরস্কারে ভূষিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ভাষা বাংলা। অস্কার বিজয়ী সত্যজিতের চলচ্চিত্রের ভাষা বাংলা । ইউনেস্কোর বিচারে পৃথিবীর মধুরতম ভাষা বাংলা ।বিবেকানন্দ থেকে নজরুল ইসলাম- শরৎচন্দ্র-জগদীশচন্দ্রের ভাষা বাংলা ভাষা । বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত এই ভাষায়। বাংলাদেশের সুত্রে আন্তর্জাতিক-ভাষা বাংলাভাষা । তাকে বাদ দেরার এই অন্যায়-সাহসের জন্য দায়ী এককথায় আমাদের রাজনৈতিক-সাম্প্রদায়িকতায় বিভাজিত দলগুলি।এরাজ্যের দলগুলি তামিলসহ অন্য রাজ্যের মত ক্ষুদ্র স্বার্থ ভুলে রাজ্যের স্বার্থে এক হতে পারেনা ।অন্য দিকে আমাদের নামী বুদ্ধিজীবীদের বেশ একটা অংশ ভয়ানক স্বার্থপর ।তাদের উপদেশ নিয়েই প্রাকৃতিক বন্যাকেও একশ্রেণীর নেতারা ঘোষণা করে ‘ম্যান মেড বন্যা’ বলে। আসলে এদের কাছে পার্টির সংকীর্ণ স্বার্থ রাজ্যের স্বার্থের চেয়ে বড়।সে সব কথা মনে রেখেই বলি এবার সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের অনুবাদের ভাষা প্রসঙ্গে যখন বিধান সভা, বার এসোশিয়েশন ও আমাদের সাংসদেরা পার্লামেন্টে উচ্চকন্ঠ প্রতিবাদ করলেন তখন হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্থানপন্থী এই সরকার বাংলার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ ঘোষণা করলেন এখন থেকে সুপ্রিম কোর্টের রায় হিন্দি,বাংলা, অহমিয়া, উড়িয়া, কন্নড়, মারাঠি, তামিল, তেলুগু ও উর্দুতেও দেওয়া হবে। তবে উল্লেখ্য নানা রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম,ত্রিপুরা, আন্দামান, ঝাড়খন্ড, বিহার সহ সারা ভারতে আমাদের মত বাংলাভাষী নানা সংগঠন ও বিশিষ্ট আইনজীবীরাও এর প্রতিবাদ করেছিলেন। এখানে পাঠকদের জন্য ৮ই আগষ্ট,২০১৯, পত্রিকার একটি খবর উল্লেখ করি, পার্লামেন্টে মাতৃভাষা ভাষণের আইনত নিয়ম থাকলেও নানা চক্রান্তের ফলে সে ব্যবস্থা প্রায় অকেজোই ছিল ।তবে এই খবরে প্রকাশ অনুবাদের সে সুযোগ নাকি রাজ্য সভায় অনেকেই ২০১৯শের বাদল অধিবেশনে গ্রহণ করেছেন।এবং ব্যবস্থারও নাকি উন্নতি হয়েছে।ভালো খবর।আশাকরি এর পরেও এ ব্যবস্থা কার্যকরী থাকবে।।
ভাষা শিক্ষা প্রসংগঃ এই তো কয়েকদিন আগে(জুন-২০১৯) কেন্দ্রীয় সরকার যখন জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করে তার মধ্যে সুকৌশলে সমস্ত রাজ্যে হিন্দিভাষা শিক্ষাকে আবশ্যিক বলে ঢুকিয়ে দেয়। এই খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ ভারতে তীব্র প্রতিবাদ ওঠে। বিশেষ ভাবে প্রতিবাদ করে তামিলনাড়ু।এমন কি আমরা যে ত্রি-ভাষা ফর্মূলার সুষ্টু প্রয়োগের দাবি করি, তারা সে ত্রি-ভাষা ফর্মূলারও প্রতিবাদ করে। তাই আজও পর্যন্ত তামিলনাড়ুতে তাদের রাজ্যভাষা কেবল তামিল। ইন্টারনেটে দেখলাম ইংরেজি সেখানে এডিশন্যাল স্টেট লেঙ্গুয়েজ । হিন্দির কোন স্থান তাদের শিক্ষায় ও প্রশাসনে নেই।এ জন্য তাদের রাজ্যে ভাষা-সংস্কৃতি প্রশ্নে সার্বিক ঐক্য আছে।তাই এবার ঘোষণা করা জাতীয় শিক্ষানীতির ভাষা ফর্মূলার নামে হিন্দি চাপানোর সর্ব প্রথম বিরোধিতা করে ডি এম কে, তার সঙ্গে কংগ্রেস ও বামপন্থীরা । এমনকি তামিলনাড়ু রাজ্যে মোদির সহযোগী দল এ আই ডি এম কে, এন-ডি-এর শরিক হয়েও কেন্দ্রকে দৃঢতার সঙ্গে জানিয়েছে যে তারা তামিলের দ্বিভাষা-নীতির থেকে একচুলও নড়বেনা। পশ্চিমবঙ্গেঃ রাজ্যের বৃহত্তরস্বার্থে এই সার্বিক ঐক্য বাংলা কবে দেখাবে জানি না। এমনি দুর্ভাগ্য আমাদের।এনিয়ে কলকাতার একটি দৈনিক পত্রিকা তাদের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে তীব্র আক্রমণ করে, সঠিক ভাবেই লিখেছেন,” পূর্বে তাহারা ইংরাজি নবিশ ছিল, সম্প্রতি হিন্দিতে তাহার প্রীতি প্রবল।..তামিলনাড়ুর উত্তাল প্রতিবাদের পাশাপাশি বঙ্গের আত্ম সমর্পণ দেখিলে আশঙ্কা হয়, এই রাজ্যে বুঝি হিন্দি আর ‘চাপাইয়া’ দিতেও হইবেনা—রাজ্যবাসী তাহাকে স্বেচ্ছায় বরণ করিয়া লইবে। আত্মপরিচয় ভুলিতে এ হেন ব্যাকুলতা এখন বাঙালির অভিজ্ঞান।”(*২) এই অতি-উদারতা তথা আত্মস্বার্থপর ও আত্মবিস্মৃতির চোরাবালি-স্রোত বাংলার ভাগ্য বিধাতাদের যে অদূর ভবিষ্যতে কোথায় নিয়ে যাবে তা জানি না।!স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলার স্বার্থের বিরোধিতাকরা কেন্দ্রীয় সরকারের অঘোষিত ধর্মযুদ্ধ। অন্য দিকে বাংলার শাসকদেরও তোষণের এমনই প্রবাহ যে তাদের মাথায় নেই এ বাংলার লোকসংখ্যার ৮৬%এর উপরে বাঙালি। তাই যখনই মুসলমানদের জন্য কিছু করার কথা তারা ভাবেন, তা যায় উর্দুভাষী মুসলিমদের দিকে ।(*৩)। সংখ্যালঘু ভাষা হিসেবে উর্দুকে যা দেওয়া উচিত তা দেওয়া হোক কিন্তু মুসলমান দের ৯০%ই যে এ রাজ্যে বাঙালি একথা ব্রাহ্মণ্যবাদী মানসিকতায় ভরকরে ভাবলে চলবে কেনো? আমি দেখেছি অনেক তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ বলেন,‘তুমিতো মা ভালোই বাংলা বলো ? তোমার নাম ফিরোজা? –তুমি মুসলিম?”—এটা সেই অজ্ঞতারই মতো হল। কিন্তু একটা সরকারতো একজন মানুষের ভ্রান্তির মতো কাজ করতে পারেনা। করা উচিতও না। তাদের পরিকল্পনায় রাজ্যের এই ৮৬% মানুষের স্বার্থের কথা মনে রাখা প্রয়োজন।এখানে রাজনৈতিক নেতাদের চোখে কেবল ভোট। তাই ছোটছোট গ্রুপের বিশেষ করে ভাষা ও ধর্মীয়সংখ্যালঘু, মতুয়া, রাজবংশী, আদিবাসীদের যে গুরুত্ব (অন্তত প্রচারে ও প্রতিশ্রুতি দানে)তারা দেন তা থাকে না এই সংখ্যাগুরু তথা বাঙালির অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে । তা লাগতোও না যদি ভারত সরকারের কূটচক্রান্তের নিত্য-নিয়ত বলি হতে হত দেশ ভাগের বলি এই রাজ্য ও তার ভাষাকে । এর সূচনা অবশ্য বিধান রায়ের সময় থেকে । যার ধারাবাহিকতা সিদ্ধার্থ রায় থেকে তার কন্যাসমা বর্তমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা-মাটি- মানুষ-সরকার পর্যন্ত প্রবাহিত । তা্র আগে ইতিহাসের কিছু কথা একটু উল্লেখ করিঃ ১৯৫৮সালের ১৯শে মার্চ, বিধান সভায় বামপন্থী বিধায়ক, কমিউনিষ্ট নেতা সোমনাথ লাহিড়ী বলে ছিলেন,‘যেভাবে অন্যান্য রাজ্যে সেই রাজ্যের ভাষাকে সরকারীস্তরে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, আমরা পশ্চিমবঙ্গে তা যদি না দেই, তাহলে ক্রমশ অন্যান্য ভাষা এসে আমাদের গ্রাস করতে পারে। এই সংকটের মোকাবিলার জন্য যা যা করা দরকার আমাদের এখনই তা করতে হবে।’-এই কথার তেমন কানদেন নি মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়।তার পূর্ব সিদ্ধান্তেই তিনি অনড় রইলেন। যা এর কয়েক দিন আগে কলকাতার একটি সংবাদ পত্রের সাক্ষাৎকার(*৪)প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি বলেন যে,“১৯৬৮র আগে কোন ভাবেই বাংলাভাষাকে সরকারী স্তরে ব্যবহা্র- যোগ্য করে তোলা যাবে না এবং আমি ততদিন বাঁচব না, সুতরাং এ নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই।”(*৪)। কেবল এক্ষেত্রে নয়, নব্যবাংলার রূপকার বলে আমরা যাকে আজও পূজাকরি তার অনেক অবদান থাকলেও বাংলা ভাষা ও বাঙালির স্বার্থ রক্ষায় আমরা তার ভুল সিদ্ধান্তের ফলে আজও জর্জরিত হচ্ছি। যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী পুরুলিয়া ও ধানবাদ সহ গোটা কোলিয়ারি ও রাঢ় অঞ্চলের বাংলা ভাষী মানুষ। রাজ্য ভাগের নামে বাংলার স্বার্থের দিক বিবেচনা করে তার ভূমিকা ইতিহাসবিদদের হয়তো নতুন করে লিখতে হব। শুধু রাজ্য ভাগের ক্ষেত্রেই নয়,মনে করুন আসাম-ত্রিপুরার একজন উদ্বাস্তুকেও যেখানে রাজ্যের বাইরে পাঠানো হলোনা সেখানে কেন পূর্ব বাংলার গরিব ও নিম্নবর্ণের উদ্বাস্তুদের সারা ভারতের ভয়ানক-সবস্থানে নির্বাসন দেওয়া হল ? আজকে না হোক আগামী দিনের সচেতন মানুষ তার জবাব দিহি চাইবে।কেবল তাই-ই নয় পশ্চিম পাকিস্তানীদের সেদিন থেকে আজও পর্যন্ত(*৫) যে সুযোগ সুবিধা ও নাগরিকত্বের পরিস্কার ও সুষ্টু ব্যবস্থা হয়েছে তা কেন হয়নি এই হতভাগ্য দলিত ও দরিদ্র বাঙালিদের জন্য? ২০০৩-০৪ সালে বিজেপি যে নাগরিক আইনের ভয়ানক সংশোধনী পাশ করেছিলো, তা ছিল বাঙালির কাছে এক অভিশাপ।বিশ্ব জানে এই চক্রান্ত সুভাষচন্দ্র বোস থেকে জ্যোতি বোসদের বাংলাকে শেষ করে দেবার চক্রান্ত। যা পশ্চিমারা ধারাবাহিক ভাবে করে আসছে,সে বিষয়ে তামিলদের মতো এ রাজ্যের ও ভাষার স্বার্থে কেন বাংলার রাজনৈতিক দলগুলি ঐক্যবদ্ধ হতে পারল না এবং আজও পারছে না, তাও ভাবতে হবে। কেবল ভ্রাতৃ-হত্যায় দক্ষতা দেখাল্, বরোধীদের পার্টি অফিসের দখল নিলে আর ভোটের বিরোধী প্রার্থীর কোমরে লাথি মারলেই কোন জাতি বা রাজ্য উন্নত তো হতে পারে না, বরঞ্চ জাতির সম্মানকে ডোবায় আর আর সেই সঙ্গে নিজেও সে আগুণে পুড়ে মরে। আমরা সেই দাবানলের পুড়তে শুরু করেছি।
এখন মূল কাজঃ অনেকেরই মনে আছে ২০১৭ সালের ১২ই মে রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এবং কয়েকদিন পর শিক্ষামন্ত্রী তার বাড়িতে জরুরী সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যের সবধরনের স্কুলে বাংলা আবশ্যিকভাবে পাঠ্য বলে ঘোষণা করেন. আনান্দবাজার পত্রিকায় ১লা জুন তা প্রকাশিত হয়। Times of India-র ভাষায়.’Every student going to school in Bengal will have to study Bengali as a compulsory subject from Class-1 to Class X.”…. “including …ICSE and CBSE.’’। কিন্ত আমাদের দুর্ভাগ্য এই ঘোষণার সরকারী আদেশনামা প্রকাশের জন্য আমাদের বাংলাভাষা মঞ্চের মতো নানা সংগঠনের পক্ষথেকে বার বার ডেপুটেশন, স্মারক লিপি প্রদান, মিছিল-মিটিং করা সত্ত্বেও কিছুই হল না। সারা ভারতের অন্যান্য রাজ্যে এই ভাবেই রাজ্যের প্রধান ভাষাকে যেখানে রাজ্যের সব ধরনের স্কুলে তারা আবশ্যিক করেছে, সেখানে বাংলা হাঁটছে ঠিক তার উল্টোপথে।তাই নিয়মের মধ্যে যে স্থায়ী কাজ সরকার করতে পারতো তা না করে বর্তমান সরকার তাকে নষ্ট করলোঃ ক) তোষণের নাম করে ভোটের লোভে রাজ্যের ৮টি ভাষাকে(*৬) রাজ্যভাষার অভিধা দেওয়া হল। তার জন্য ডাক, ব্যাঙ্ক, থেকে কোল ইন্ডিয়া, সেইল, বেঙ্গল ক্যামিক্যালসহ সর্বত্র কেন্দ্রীয় নিয়োগে বাংলার পরিবর্তে এসে গেছে হিন্দির একছত্র আধিপত্য। যে সর্বনাশে সিং হ দুয়ার দিদিমণি নিজেই খুলে দিলেন ।বাংলার আকাশ তথাকথিত উদারতার এমনি সব বিষবৃক্ষে ভরে উঠেছে,যে ৮৬% মানুষেরই এখন ত্রাহি ত্রাহি রব।অন্য দিকে কাজের কাজ কিছু করার পরিবর্তে মাননীয়ার ভাটপাড়া কান্ড প্রকারান্তে সমাজ বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উৎসাহিত করলো ।সঙ্গে সঙ্গে বাংলার দীর্ঘ দিনের সহিষ্ণুতার ঐতিহ্যে কলঙ্ক লেপন করলো। ফলে তার যেটুকু জন প্রিয়তা ছিলো তাকে ভয়ানক বিপদের সামনে দাঁড় করালো ।আর অন্য দিকে সরকার ঐতিহ্য পূর্ণ বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিকে কোথাও তুলেদিল, কোথাও বাংলা শাখায় শিক্ষক না দিয়ে, পঠন-পাঠন ব্যবস্থার উন্নতি বিধান নাকরে, পাশেই ইংরেজি মাধ্যম স্কু্লখুলে দিল। ফলে গোটা শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করে বাংলার শিক্ষার সুনামের উজ্জ্বল ধারাকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দেওয়া দিল।আর আজকের ক্ষমতাবান ছাত্ররা রবীন্দ্র-নজরুল-শরৎ-সুকান্তকে জানে না। আর অবাঙালিরা বাংলায় বাসকরে বাংলা সংস্কৃতি নাজেনে বম্বের চটুল-সংস্কৃতিতে ডুবে যাবে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন করি মুলকাজ না করে, কেবল রাস্তায় চীৎকার করে অবাঙালি সংস্কৃতিকে গালদিলে হবে না । তাদের ভালবেসে বাংলা শেখার নমনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। শরৎচন্দ্রের সঙ্গে তাদের প্রেমচন্দ পড়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাও করতে হবে । বাংলার সঙ্গে তার মাতৃভাষা পড়ার যে সু্যোগ এরাজ্যে আছে তাকে সারা ভারতে প্রবাসী বাঙালিদের জন্য প্রসারিত করতে হবে। ইতিমধ্য বিজেপি চালিত ত্রিপুরা সরকার বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির ৮২০টিকে প্রাইভেট করে দিয়েছে।ও পথে না গিয়ে আমাদের এক্ষেত্রে ওড়িশার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।যাদের পন্ডিতেরা নানা গবেষণা আর তথ্যের পরে ভর করে বাংলা ভাষা ভগ্নী সমা ওড়িয়াকে ধ্রুপদী ভাষার স্তরে উন্নীত করে তার বিকাশের জন্য বছরে বছরে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করাচ্ছে। যে রাজ্য অন্য রাজ্যে ওড়িয়া পড়ানোর নানামুখী সহায়তা করে চলেছে। যাদের আছে ওড়িয়া ভাষা উন্নয়ন মন্ত্রী ।আমাদের শাসকদল এসব নাকরে তার ভ্রান্তি-মোচনের জন্য, বিপদ থেকে উদ্ধারের সস্তাপথে একদিকে হিন্দুত্বের প্রসারে নেমে পড়লেন।“তোমার রাম তো আমার হনুমান,-এই দেখ হিন্দুনারীর শাঁখা আর পলা বিলি করছি ” ।আবার সস্তা চটক দেখাতে হিজাব পরছি, পূজা ও নমাজে যাচ্ছি। কী সব ব্যাপার! মমতা ব্যানার্জি সত্যিকার ধর্ম নিরপেক্ষ রবীন্দ্র-নজরুলের বাঙালি-জাতিসত্তার জাগরণে মুক্তি না-খুঁজে, অন্ধকারের পূজারী হয়ে উঠলেন । এই পথেও পার পাবেন বলে মনে না-হওয়ায় এখন ভাড়া করা বুদ্ধিজীবীর সাহায্যে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করছেন। আবার বলি এই সব ভাড়াটে বাহিনী তো বাংলার ঐতিহ্য জানেনা। বাংলার সম্পদ কোথায় শক্তি-ইবা কোথায়, তার কিছুই এরা জানে না । তাই তার পরামর্শে এ রাজ্যে তিন তিনটি হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার মাধ্যমে দিদি বাঁচারচাবি খুঁজে পাবেন না; তেমনি তিনি বাংলা ভাষা ও বাঙালি বিরোধী যে সব পদক্ষেপ দিয়েছেন তা যদি সংশোধন নাকরেন তাহলে তার হাত দিয়েই তার ও বাংলার সর্বনাশ করবেন। আশাকরি একেবারে নিবে যাবার আগে তার এসব ‘একুশের আইন’ পাল্টাবেন।
শেষ কথা কে বলবে?ঃ আমাদের স্মরণে নিশ্চয় আছে যে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মাতৃভাষা ও মাতৃসংস্কৃতিই পূর্ব পাকিস্তানকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশে উন্নীত করেছে। ভারতে দক্ষিণপন্থীরা আজ যে ভয়ানক আক্রমণ বাঙালি জাতিসত্তার ওপর নামিয়ে আনছে তা ঐক্যবদ্ধ ভাবে বাঙালি রোধকরতে না পারলে আমরা নজরুল, রবীন্দ্রনাথ থেকে আজকের তরুণ কবিদের যেমন রক্ষা করতে পারব না, তেমনি বাঙালি অনীকেত জাতিতে পরিনত হতে যাবে । এখনই যা হতে চলেছে; সারা ভারতে ছড়িয়ে থাকা প্রায় দুকোটি বাঙালির ক্ষেত্রে । আমাদের বাবু-চোখে না পড়লেও সে বিলুপ্তির কাজ কিন্তু প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে । আবার আসামঃ কলকাতার তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা আজকের আসামে গিয়ে কবিতা পড়ে চলে আসতেন কিন্তু তাদের সমস্যার কথা হৃদয়ঙ্গম করেননি। দুদিন আগেও এরা খোঁজ রাখতেন না আসামের প্রায় দেড়কোটি বাঙালি অন্ধ-রাজনৈতিক চক্রান্তে আজ বিদেশী হিসেবে তাড়িত হবার মুখে। এই সময়ে জানতে ইচ্ছে হয়,-তাদের সমস্যা নিয়ে এ রাজ্যের তাবড় তাবড় বাঙালি লেখকরা কে-কটা বই লিখেছে? বরাকের ভাষা আন্দোলনের সাম্প্রতিক মুখ্য মুখ তপোধীর ভট্টাচার্যসহ ওখানকার অনেক বন্ধুরা লিখলেও কলকাতায় সে উদ্যোগ কোথায়? আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি জানি সাহিত্যিক গুরু বিশ্বাসের তিনটি উপন্যাসের কথা তার দুটি আমি দেখেছে(বানভাসী-১৯৬০-৬১র বাঙাল খেদার প্রেক্ষিতে)আর পোঁকা(অহমিয়া অসহিষ্ণুতা নিয়ে)। ৩য় টির মান মনোভূমি(বর্তমান বাঙালির সমস্যা-কেন্দ্রে লেখা)।আর উল্লেখযোগ্য বই আমাদের চোখে পড়ে নি কেন? সংবাদ পত্রের ভূমিকা ইবা এসব ক্ষেত্রে কি? বাঙালি জাতিসত্তা গঠনে বাংলা সংবাদ পত্রের কোন ভালো ভূমিকা থাকবে না? এতো-তো পূজো সংখ্যা, তাতে কটা উপন্যাস আমাদের এই আক্রান্ত ‘নতুন ইহুদীদে’র নিয়ে লেখা হয়েছে? আমাদের এতো আনন্দের সময় কি এখন?! দেখুন আমরা কলকাতায় ছোট ইলিশ–বড় ইলিশ উৎসব থেকে কালি-দুর্গার খুঁটি পুজো দখলের রাজনীতি করছি। জ্বলন্ত আসামে যেন সব ঠিক হয়ে গেছে আজ ১৯লক্ষ হোলেও শেষ পর্যন্ত ৪০-৫০ লক্ষ লোক তাড়িত হবে;- এই তো?-ভাবুন এ সব নিয়ে কি নিষ্ঠুর নীরবতা ! আর বাঙালি হিন্দুরা ভাবছে ওর তো মুসলমান দের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠাবে।কিন্তু ভাবুন আর বুঝূন এদেশে যে মুসলমানেরা ১০০/১৫০ বছর আগে থেকে অবিভক্ত ভারতের অধিবাসী , তাদের কিভাবে, কোন আইনে বাংলা দেশ পাঠাবেন ?তারা নেবেইবা কেন? আর অড়া বলছে হিন্দুরা তো থাকতে পারবে।-হ্যাঁ, থাকতে পারবে ।মধ্যযুগের দাসদের মতো কোন অধিকার হীন ‘বন্ডেড-লেবার’ হয়ে থাকবে।-এই তো কর্পোরেট পুঁজি চাইছে । আর সে জন্যই চাইছে আজকের আরো উত্তেজনাকর অবস্থার নব নব সৃজন।–তাই চাইছে একটা য্যুদ্ধোন্মাদ দেশ ও ধর্মান্ধ জাতি। কিছুদিন আগে পর্যন্ত যাও-বা মমতাদেবী একটু বাঙালির পক্ষে ঠিক-ভুল যাহোক বলছিলেন,তা এখন আর বলছেন না । কারণ গোবলয়ের ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীর মতে এরাজ্যের ভোটের অংকে আসামী বা অন্য রাজ্যের-বাঙালিদের প্রভাব তেমন নেই। ফলে মমতাদেবীকে কেন্দ্রকরে সারা ভারতের বাঙালি্দের মনে যে আশাবাদ ঘনীভূত হয়ে উঠেছিলো তাও পি-কের এডভাইজের ফলে ফিকে হয়েগেল।আর রাজীবের আজীব-ফর্মূলায় তথা মুক্তির যুক্তিরশর্তে মোদী-শা-র সাক্ষাতকারের পর সব যেনো কেমন ঠান্ডা।
এখন ভরসা কি বামপন্থীরা ?ঃ এরাজ্যে বামপন্থীরা ভোট রাজনীতির হিসেবে বিশাল সংকটে। নিজেদেরই অস্তিত্বের সংকট।তাও সম্প্রতি বাংলাপ্রেমীদের নানা প্রচারের ফলে আসামী স্বার্থান্ধ-পন্ডিতদের দেওয়া মিথ্যার মোহপাশ থেকে তাদের মোহমুক্তি ঘটেছে ।তাই বামপন্থীদের আসাম শাখা ক্ষুদ্রহলেও (গত ৮/৮/১৯ সংবাদপত্রে দেখলাম) বাঙালিদের হেনস্তার বিরুদ্ধে ও সুষ্টূ নাগরিকপঞ্জির দাবিতে গৌহাটির এন আর সি-দপ্তর ঘেরাও করেছে। অল্প হলেও এ আশার খবর ।কিন্তু যে ১৯লক্ষ বাঙালিকে ওরা বেনাগরিক ঘোষণা করলো সে বাঙালিদের কি হবে?-সে প্রশ্নে সবচেয়ে আমাদের রাজ্যে বড় খবর হোল বাংলার কংগ্রেস-বাম জোট আর টি এম সি দলও আর এস এস-এর এই এন আর সি-র চক্রান্তের বিরুদ্ধে বিশাল ভাবে পথে নেমেছে। সারা ভারতে আমাদের এই ঐক্যবদ্ধতার উপরই নির্ভর করে নতুন যুগের ভারতীয় বাঙালির জাতিসত্তার নির্ণেয়মান ভবিষ্যৎ।তার জন্য কোন রাজনৈতিক দাদাদের সরাসরি সমর্থন ছাড়াই আমাদের এগুতে হবে। এগুতে হবে বিদ্যাসাগর-মধুসুধন-রবীন্দ্র-নজরুল-সুভাষচন্দ্রের পবিত্র বাঙালি জাতিসত্তার মহান সামাজিক পতাকা তলে।
ভারতে বাঙালির হেড কোয়ার্টার?ঃ যেহেতু এখনও এই রাজ্যই ভারতের বাঙালির মেইনল্যান্ড, তাই কলকাতার বাঙালিরা যত উদাসীনই হোক, তাদের দিকেই অনেক বিষয়ে তাকিয়ে থাকেন সারা ভরতের বাঙালিরা । তবে আগের মতো কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দেশ’ পত্রিকাসহ বাংলা সাময়িক পত্রপত্রিকা বিপুল পরিমানে আর বাইরের স্বচ্ছল বাঙালি পরিবারেও যায় না ।সাম্প্রতিক খবর বিহারের বাঙালি অধ্যুষিত ভাগলপুরে আনন্দবাজারসহ কোন দৈনিকপত্রিকা যাওয়া বন্ধহয়ে গেছে ।কলকাতার আনন্দবাজারেও সে খবর আমরা দেখিনি। আমি ওখানে না গেলে তা জানতেও পারতাম না। সে সব অঞ্চলে আজকের মা মাসীরা এতদিনে অনকাংশেই বাংলা-ছেড়ে হিন্দি, ইংরেজি ও স্থানীয় ভাষায় সংযুক্ত হয়ে গেছেন। বরাক ছাড়া সারা ভারতের কোনো শহরে বাঙালির নিজস্ব দৈনিক বা সাপ্তাহিক পত্রিকা নেই, তাই স্থানীয় সংবাদ ও অন্যান্য প্রয়োজনে নানা রাজ্যের বাঙালিরা স্থানীয় ভাষায় অভ্যস্ত হতে বাধ্য হয়েছেন।ভারতে কেবলমাত্র কলকাতা শহরেই সে রাজ্যের প্রধান ভাষা (বাংলা) না-জেনেও প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাস করা যায়। এই অবৈজ্ঞানিক শিক্ষানীতির জন্য দায়ী আমাদের অবিবেচক ও উদাসীন রাজনৈতিক পার্টিগুলি, বিশেষকরে তার মুখ্য নেতারা । আজ এ পাপের দ্রুত স্খালন করা প্রয়োজন । তার জন্য সর্ব প্রথম দরকারঃ
১।।প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত রাজ্যের সব ধরনেরও সব বোর্ডের স্কুলে বাংলা আবশ্যিক করার পূর্ব ঘোষণা কার্যকরী করতে হবে ।
২।। রাজ্যের প্রধান ভাষা করতে হবে কেবল বাংলাকে। স্বয়ংশাসিত জেলার জন্য বাংলার সঙ্গে থাকবে সেখানকার প্রধান ভাষা,যেমন নেপালি। ইংরেজি হবে এডিশন্যাল অফিশিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ(তামিলের মতো)।
৩।। এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারী চাকুরির ক্ষেত্রে পূর্বের মতো বাংলা লিখতে পড়তে ও বলতে পারা আবশ্যিক করতে হবে।
৪।। এরাজ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে ও বেসরকারী দপ্তরে নাম ফলক থেকে জন-সংযোগের সমস্ত-স্তরে রাজ্যর মুখ্য ভাষা বাংলাকে আবশ্যিক করতে হবে।
৫।এ সমস্ত কাজ ও সারা দেশে বাংলা ভাষা ও বঙ্গসংস্কৃতি রক্ষা ও প্রসারের জন্য রাজ্য সরকারের একজন মন্ত্রী রাখতে হবে।
৬।।রাজ্য সরকারকে এসব বিষয়ে সজাগ রাখতে,সামাজিক সংগঠনগুলিকে সক্রিয় থাকতে হবে। তাহলেই বাঙালি জাতিসত্তার মানবিক মুক্তি ঘটতে পারে। বাংলা ভাষা ও বঙ্গসংস্কৃতির ওপর ভারতের পশ্চিনশাসক শক্তি যে ভয়ানক সার্বিক আগ্রাসন নামিয়ে এনেছে তা রোধ করতে দলমত নির্বিশেষে সমস্ত বাঙালি শিল্পী সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও গণতান্ত্রিক মানুষের সংঘবদ্ধ আন্দোলন যেমন চাই, তেমনি চাই রাজনৈতিক দলগুলির সুবিবেচনা নির্ভর ভাষানীতি ও প্রয়োজনে তার জন্য গণ-আন্দোলন। এই পথই একমাত্র সুস্থ পথ। আর তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে নানা ভাষা ও নানা সংস্কৃতির সুস্থ উন্নয়নের আন্দোলনে বিজ্ঞানবাদী প্রগতিশীলদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে । অন্য অন্ধ ও উগ্রশক্তি সামনে এসে গেলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।
আমাদের নিবেদনঃ সারা ভারতে বাংলাভাষা ও বাংলাভাষীদের নিয়ে দীর্ঘ ও নিয়মিত গবেষণা ও আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ভিত্তিতে বলতে চাইঃ
ক)আমাদের ভাগ্য নিয়ন্তা হচ্ছে রাজনৈতিক শক্তি । আমাদের মতো সামাজিক সংগঠনগুলি হল অনেকটা পিতৃতান্ত্রিক সংসারে মায়ের মতো। বাড়ির যে দুর্বল তার জন্য সারাক্ষণই মায়ের চোখে থাকে জল। এই অশ্রুই হল সংসারের স্বর্ণগ্রন্থী তথা লাবণ্য ও শক্তি। উৎসবের দিনেও মা সবার আড়ালে দূরেথাকা বিপ্লবী ছেলেটার জন্য চোখের জল ফেলেন । এই মায়ের কথার দাম,যে সংসারে থাকে না, সে সংসার ধীরে ধীরে যান্ত্রিক আর জয়-পরাজয় সর্বস্ব হয়েযায়।এই ধরনের স্বার্থ-চিন্তার বাইরেও এক শ্রেণির দল ও গণসংগঠন সমাজে আছে, আমাদের দাবিপত্র তাদের কাছে-তারা যদি জয় পরাজয়ের উর্ধ্বে-উঠে মহান মানবিকস্বার্থে ভাষা ও সংস্কৃতির সার্বিক দিকনিয়ে না ভাবেন, তো যে কোন জাতির পক্ষে তা ভয়ানক বিপদের । যে বিপদের অনেকটা কিনারে এখন ভারতে বাঙালি জাতিসত্তা ও তার সার্বিক অস্তিত্বের সংকট ।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের ভাবতে হবেঃ ভারতের মতো দেশে ভাষা রাজনীতি, ভাষা অর্থনীতি, ভাষা ক্ষমতায়ন, ভাষা সংস্কৃতির মত ভয়ানক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে । আমাদের মনে হয়েছে এসব ক্ষেত্রে বাঙালি বুদ্ধীজীবী ও রাজনীতিকরা ভীষণ ভাবে উদাসীন।তার প্রমান হিসেবে দুটো বিষয় লক্ষ্য করুন -
১) বিজেপি আসার পর নানা মুক্তচিন্তা বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রদের ওপর যে লাগাতার আক্রমণ ইত্যাদি হল তাতে সারা ভারতের পুরস্কার-প্রাপ্ত বুদ্ধিজীবীরা অনেকে তাদের পুরস্কার ফিরেয়ে দেন।কিন্তু বাংলার বুদ্ধিজীবীরা তা করা থেকে অধিকাংশই বিরত থাকেন । একমাত্র তরুণ কবি মন্দাক্রান্তা সেন ছিলেন ব্যতিক্রমী।
২) আর একটি কথা,-প্রবাসী বা অন্য রাজ্যে নির্বাসিত বাঙালিদের বিষয়ে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা যেন কোন ভাবেই দায়বদ্ধ নয়। এর সামান্য প্রমাণ হিসেবে আমি একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি; বর্তমান উত্তরাখন্ডের উধমসিং নগর জেলার বাঙালি উদ্বাস্তু বসতি অঞ্চল ম্যাথোসে ১৯৮৬সালের দুর্গা পূজোর সময় বাঙালিদের উপর স্থানীয় গুন্ডাদের ভয়ানক আক্রমণ নেমে আসে । খুন, রক্তপাত তো ছিলোই আর ছিল পূজোর প্যান্ডেলে আগত বাঙালি নারীদের ওপর নির্যাতন। কিছু স্থানীয় হিন্দি পেপারে সংবাদটি এলেও তা দেখে দিল্লীর বাঙালি এলিট সাংবাদিকরা এ সব তুচ্ছ খবরে নজর দেবার আগ্রহই দেখান নি। অন্য দিকে আসামে যে ধারা বাহিক ভাবে দক্ষিণ পন্থার নেপথ্য মদতে বছরের পর বছর সেখানকার উগ্রবাদীরা বঙ্গাল-খেদা দাঙ্গা করেছে তার তাৎক্ষনিক সংবাদ নাহয় উত্তেজনা ছড়াবে বলে আসেনি কিন্তু পরে তার বিশ্লেষণ ক’জন গবেষক কবে করেছেন? কেন করেন নি? আর তাই আসামে লক্ষ লক্ষ বাঙালিও যখন আক্রান্ত তখনো বাংলার রাজনৈতিক দলগুলোর কি বক্তব্য হবে তা,প্রথমে তারা সঠিক ভাবে বলতেই পারেনি। বাংলা নাকি ভয়ানক তত্ত্ব সচেতন?- এ কি তার পরিচয় ? আসলে আমাদের মধ্যে একটা নির্বাচিত আনন্দ ও সুনির্বাচিত বেদনাবোধ আছে । তাই আমাদের তত্ত্বজ্ঞানী বুদ্ধিজীবীদের এই আলোর আড়ালের নিজের মানুষদেরও নিজের বলার মানসিকতাই তাদের নেই ।এ জন্যই ১৯০৫ এর বঙ্গভংগ আমাদের যতটা উত্তেজিত করে, আমরা প্রতিবাদ করি, সেভাবে আমরা প্রতিবাদ করি না ১৯৪৭-এর বঙ্গভঙ্গ তথা দেশ ভাগে। কারণ তা ছিল আমাদের বড় বড় বর্ণবাদীনেতাদের সমর্থনে গড়ে ওঠা বিপর্যয়।
আজকের উদ্বেগের কথাঃ মনে করুন গত ৫ই আগস্ট,২০১৯, জম্বু-কাশ্মীরকে ভেঙ্গে দুখণ্ড করেদিল বিজেপি সরকার । সংখ্যার-জোরে রাজ্যের মর্যাদা থেকে নামিয়ে তাকে ভাগকরে কাশ্মীর ও লাদাক নামে কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলে করে দিল। আইনের বিচারে এ হল এক ধরনের অসাংবিধানিক কাজ ।কিন্তু ওদের সমর্থকেরা সোসাল মিডিয়ায় বিজয় উৎসব শুরুকরে দিল। তাদের যুক্তি এ কাজ তারা করছে জনগণের সমর্থন নিয়ে।যুক্তি দেখাচ্ছে এসব তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে লেখাছিল ।-এই ঘটনার সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের মত বাংলা-প্রেমী মানুষের মাথায় অনেকগুলো আশঙ্কার কথা ঘুরপাক যাচ্ছে।যেমনঃ
ক) বিজেপি তাদের ইস্তেহারে ও নির্বাচনী ভাষণে এবারও তো বলেছে যে পশ্চিমবঙ্গেও তারা এন আর সি-শুরু করবে। তাহলে কিছুদিনের মধ্যে আমাদের অনেককেই হয়তো আসামের মতো বিনা বিচারে ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতেহবে। আসামে আজ পর্যন্ত ডিটেনশন ক্যাম্প ও এন আর সি-র নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে কয়েক-শো বাঙালি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
খ) লোকসভা ও রাজ্য সভার বর্তমান যা অবস্থা তাতে তারা ২০১৯শের বাদল অধিবেশনে রাজ্যসভায় কমসংখ্যক সদস্য নিয়েই ৩৪টি বিল পাশ করিয়ে নিল। যা কেবল ঐতিহাসিকই নয়,ভয়ানক আশংকারও। আমাদের দুর্বল মনের ভাবনা এই ভাবে কাল যদি তারা পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারীকরে ,তারপর এভাবেই গোর্খাল্যান্ড, কামতাপুর ও পশ্চিমাঞ্চলকে নিয়ে জঙ্গলমহল নামে রাজ্য ঘোষণা করে দেয়, তা হলে পশ্চিমবঙ্গ তো কেবল দক্ষিণবঙ্গ হয়ে যাবে ।
গ) আর পরশু যদি তারা বলেন কলকাতা কর্পোরেশন ও বিধান নগর কর্পোরেশন আর বাঙালি-প্রধান অঞ্চল নেই তাই একে নতূন ভাবে, পুদুচ্চেরি বা পন্ডিচেরির মত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করেদিলাম । তা হলে বাংলা ও বাঙালির অবস্থান কি হবে তা ভাবতে মাথাটা একদম ঘুরে যাবার উপক্রম। যারা বিজেপির ভয়ানক সমর্থক অথচ বাংলা ভাষা ও বঙ্গসংস্কৃতি ভালো বাসেন রবীন্দ্র-নজরুল-শরৎ-বিভূতিভুষণ- তারাশংকর থেকে সমরেশ,শরদিন্দু,সত্যজিৎ, মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায় পড়তে ভালোবাসেন সুধীন দত্ত থেকে জীবনানন্দ,শামসুর রাহমান পড়েন তাদের কাছে নিবেদন আপনারা কি আবার নিজেদের বিপদ নিজেরা ডেকে আনবেন?
বাঙালি জাতিসত্তা গড়ে তোলার সবচেয়ে বড় বাধাঃ পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালির বর্ণ-চেতনা পূর্ব পাকিস্তানের নিম্নবর্ণের প্রাক্তণ হিন্দুদের তথা ধর্মান্তরিত মুসলমানদের বড় অংশে ছিলোনা । কারণ তত দিনে তারা বর্ণ-হীন ইসলামে সাংস্কৃতিক ভাবে মিশে গেছেন।তাই সেখানে ধর্মের বেষ্টনী অতিক্রম করে তারা বাঙালি জাতি সত্তার এক সার্বিক বিকাশ ঘটাতে পেরেছেন।অন্য দিকে ভারতে আজ আমাদের সামনে ধর্মের নামে ভয়ংকর এক সাম্প্রদায়িক শক্তি। হিটলারের শিষ্য এরা(*৭) । আজকের এক মেরুর বিশ্বে পাগল ট্রাম্পের নেতৃত্ব নানা দেশে ভয়ানক বিপজ্জনকভাবে এগিয়ে আসছে । এই সময়ে দাঁড়িয়ে ১৯৫২-র ২১শের ভাষাআন্দোলন ও বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন ভাবে আমাদের ভারতে আক্রান্ত বাঙালির পাশে দাঁড়াতে হবে। আসলে নিজেদের স্বার্থে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যারা ধর্ম নিরপেক্ষ, মানবিক এবং রক্তের অভ্যন্তরের মিশেথাকা বর্ণবাদ থেকে মুক্ত, তাদের এর নেতৃত্ব গ্রহণ করতে হবে।কারণ হিন্দু বাঙালির ৭৬%ই অবর্ণ হিন্দু। ভারতের যে “যত মত তত পথ”-এর মহান ঐতিহ্য তার মানবিক চিন্তা –ঋদ্ধ পথই আমাদের পথ।- আজ পরীক্ষা-জাতির অথবা জাতেরে করিবে ত্রাণ। কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার”।কবির ভাষা্য বজ্রকন্ঠে উচ্চারণ করতে হবে ,”আমরা একই বৃন্তে ‘একটি” কুসুম হিন্দু মুসলমান’।না হলে বাঙালির ভবিতব্য হবে আসামের মতো আত্মধ্বংসী।
প্রথম শিক্ষা ক্ষেত্রঃ প্রসঙ্গত আমি হিন্দি ভাষা প্রসার সমিতির সভাপতি প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদের মাতৃভাষা প্রেমী সক্রিয়তার থেকে শিক্ষানিতে আহ্বান জানাই। সকলেই জানেন গো-বলয়ে জাতপাত তথা বর্ণবাদী অসাম্য কত তীব্র। তার মধ্যে দাঁড়িয়ে তিনি ভাষাগত ঐক্যের প্রশ্নে বনেদী-অবনেদী বিভাজন করেননি বলে ভারতের স্বল্পসংখ্যক হিন্দিভাষী আজ দেশের সমস্ত দেবনাগরী লিপি ব্যবহারকারী ভাষা সমূহকে নিজের ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়ে ও আরো নানা ভাবে ইংরেজির সাথে প্রশাসনিক স্তরে লড়তে পেরেছে ।আর প্রগতিশীল বাঙালি,তার ভাষার অধিকার প্রশ্নে নিম্নমুখী ।যে অহসমিয়ারা ও মণিপুরীরা বাংলা লিপি ব্যবহার করতো তাদের সাথেই দীর্ঘ দিন বাঙালির অসম্প্রীতি গৃহযুদ্ধের মতোই বেদনা পর্বে উপনীত । ক্ষমা করবেন যদি বলি বাঙালিকে আমরাই কাঙালি করে ছাড়েছি! এবং সে দায় অতীত ও বর্তমান আমাদের সবারই।
আমাদের দ্বিতীয় শিক্ষা ক্ষেত্র বাংলা দেশঃ সকলেই জানেন ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনের নেপথ্য নায়ক ছিল মুখ্যত সেখানের গণতন্ত্রিক শক্তি। বামমার্গী ভাসানী সাহেব থেকে তার শিষ্য মুজিবর রহমান আর সেদিনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্ররা।তার পেছনে ছিলো কেন্দ্রীয় পাকিস্তানী শাসকদের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য অবিচার ।সে পাটের দর, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য অর্থবরাদ্দ-সর্বক্ষেত্রে। যেমন অবিচার পশ্চিমা ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার করে থাকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে। আর সারা ভারতে বাঙালির ক্ষেত্রে। তাই জ্যোতি বাবু বা প্রণব মুখার্জি প্রধান মন্ত্রী হতে পারেন না, সে ঘরের ও বাইরের নানা আত্মদ্বন্দ্বে।কিন্তু কেন যেন এরাজ্যে বাঙালি জাতিসত্তার কথা ভারতের মতোদেশেও অনেক বাম তাত্ত্বিকদের কাছে সংকীর্ণতাবাদী কাজ বলে পরিতাজ্য ছিলো।তবে পৃথিবীতে সবই আপেক্ষিক তাই উগ্র দেশ প্রেম যখন সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির আগ্রাসী প্রশ্রয়ে ফ্যাসিবাদী চেহারার দিকে ধাবমান হয়ে ভাষিক জাতিসত্তার প্রতি আক্রমণ হানে অখন মানবিক অধিকারের আন্দোলনের পতাকা ভাষিক জাতি সত্তাকে গ্রহণ করতে হয় সামন্তবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের যৌথ আক্রমণের বিরুদ্ধে।বিশেষকরে সমাজতন্ত্রের এই বিপর্যয়ের দিনে তা আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে দেখা দেয়। যেমন দেখা দিয়েছে ভারতে । নানা ঐতিহাসিক কারণে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বন্ধু বা নরম শত্রুদের হাতে ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তর হল, তার পর থেকেই সাম্রাজ্যবাদীদের প্রধান শত্রুকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিমাতৃসুলভ দৃষ্টিতে যে দেখতে থাকে তার পরিনতিতে আজ সারা ভারতে বিজেপির এক নম্বর শত্রু বাঙালি। বিশেষ করে মুসলিম বাঙালি আর দলিত বাঙালি। তারাই এদের প্রধান আক্রমণ স্থল। তাই সারা দেশে অরা রটালো “বাংলা ভাষী মানে বাংলাদেষী।“ তারাতো বল্লোনা উর্দুভাষী মানে পাকিস্তানী। সে যাই হোক আজ আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়ানো যে আসামে বাঙালি যখন হিন্দু –মুসলিমে ভাগ হয় তখনই পতন হয়। আর বাংলায় তো সাম্প্রদায়িকতা রোধের প্রথম শ্লোগান ,”একই বৃন্তে একটি কুসুম , হিন্দু-মুসলমান।”
এই পরিস্থিতিতে প্রগতিশীলদেরও এই অবস্থার বিবেচনা করতে হবে, ধর্মীয় সংকীর্তার বিরুদ্ধে মানবিক ঐক্যের স্বার্থে। তাই তাদের চিন্তায়ও পরিবর্তন হচ্ছে ।তার সাম্প্রতিক প্রমাণ বামপন্থী প্রখ্যাত প্রাক্তন সাংসদ মোহম্মদ সেলিম N R C- বিষয়ে একটি সভায় বাঙালি জাতি সত্তার রাবীন্দ্রিক প্রসারের প্রয়োজনীয়তার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন । আর ‘ভারতের নতুন ইহুদী’ বাঙালিদের পাশে দেশের যুক্তিবাদী মুক্তচিন্তা মানুষেরা সমবেত হচ্ছেন। সে তরুণ কানাইয়া কুমার থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ পর্যন্ত।যার মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট দুনিয়া ও সামন্তবাদী বর্ণান্ধ, ধর্মান্ধদের নতুন বিষাক্ত জোটের বিরুদ্ধে সমস্ত উদার গণতান্ত্রিকও শ্রমজীবী(কৃষক-শ্রমিক) মানুষের মহান ঐক্য গড়ে উঠবে বলে মন্রে হয়। আমাদের ভাণ্ডারে সঞ্চিত আছে জাতিসত্তা ও ভাষা-বৈচিত্র্য প্রসঙ্গে তরুণ সোভিয়েতের অভিজ্ঞতা। তানিয়ে বাঙালিও মুক্তকন্ঠে এই মহাশক্তিকে উদার ও উদ্দাত্তকন্ঠে আহবান জানাবে। আমরা আশাবাদী কারণ মানবিক এবং প্রগতিশীল ভারতবাসীর উপর আমাদের আস্থা আছে ।আর আমাদের পাশে আছেন রবীন্দ্রনাথ,নজরুল,বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র, হোচিমিন,চে, ম্যাণ্ডেলা থেকে মুজিবুর রহমানের মত আন্তর্জাতিক মহান ব্যক্তিত্বেরা !
*১।এখানে একটি প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি গবেষক ও লেখক শিপ্রা বিশ্বাসের “অন্বেষণ”(১ম খণ্ড) ১৯৯৬-সংকরণ-৩২০পাতা থেকে প্রদান করছিঃ পন্ডিত জওহরলাল নেহরু, দি ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া নামক গ্রন্থে লিখেছিলেন ”বাংলার অধিকাংশ মুসলমান অতি নিম্নশ্রেণীর ধর্মান্তরিত হিন্দু।প্রতিভাহীন,নিকৃষ্ট বুদ্ধিবৃত্তি এবং শিক্ষার প্রতি অনীহা—বিশেষত ইংরেজি শিক্ষার প্রতি ঘোর বিতৃষ্ণার কারণে বাংলার মুসলমানরা অনগ্রসর জাতি হিসেবে পরিচিত।”
*২।। আনন্দবাজার পত্রিকার ২০১৯শের ৫ই জুনের সম্পাদকীয় “বাঙালি ভুলিয়াছে”।
*৩। আনন্দবাজার পত্রিকার ২০১৯শের ৬ই জুনের সম্পাদকীয়”স্ব ভাষা”।
৪। দ্যা স্টেটসম্যানে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের সাক্ষাৎকার।৪ঠা ফেব্রুয়ারি,১৯৫৮।
৫।।দেখুন সাংবাদিক রঞ্জিত রায়ের ধ্বংসের পথে পশ্চিমবঙ্গ গবেষণা গ্রন্থ । চিরায়ত প্রকাশন,কলকাতা।
৬। INDIA TO DAY –Anirban Roy,Kolkata 27th May,2011.”WestBengal to have six more languages for official use,English and Bengali are the two official (presumably,first official) languages of the state.To these will be added Urdu, Gurmukhi,Nepali,Ol-Chiki,Oriya and Hindi .মনেরাখা প্রয়োজন মমতা দেবীর অজ্ঞতা সারা বাঙালির উপর সর্বনাশ বর্ষণ করল। প্রথম কথা অলচিকি কোন ভাষা নয় , পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মূর আবিস্কৃত সাঁওতালি ভাষার লিপি। যাকে জ্যোতি বসু সরকার ভারতের মধ্যে প্রথম এ রাজ্যে সরকারী স্বীকৃতি প্রদান করে। যেমন ইংরেজি ভাষার লিপি রোমান, হিন্দির লিপি দেব নাগরি বা নাগরি । দিদি লিপিকেই ভাষা বলে চালু করে দিলেন । গুরমুখীও ভাষা নয় পাঞ্জাবী ভাষার একটি লিপি । পাঠক লক্ষ্য করুন ঐ বিশ্লেষক শ্রী অনির্বাণ রায়ের মতে , 1)”The people of Nepali descent in West Bengal’s hill districts speak Gorkhali, not Nepali. …এ বাংলার এক পুরনো পাপ. 2) রায়ের মতে “Santali 22.8-lakh,Nepali 8-lakh, Panjabi-4-lakh, Oriya just around1lakh’। তবে আমাদের মতে সাঁওতালী ভাষার মানুষ ভারতে এককোটি ।
*৭।। দেখুন আনন্দ বাজার পত্রিকার ৫ই আগষ্ট২০১৯--স্যমন্তক ঘোষের “মন্তব্য নিষ্প্রোজন” শিরোনামের উপসম্পাদকীয়। এ ছাড়া পড়ুন নীতীশ বিশ্বাস সম্পাদিত ও ঐকতান প্রকাশিত ক)মহা গ্রন্থ “ভাষা গণতন্ত্র”। খ) বাংলা ভাষা ও সংবিধান-।গ)ডুবিছে বাঙালিঃ সন্তান মোর মার । ঘ)ভারতে বাঙালি উদ্বাস্তু। ঙ) বাংলা ভাষা আন্দোলনের শহিদেরা।
এই লেখার সমস্ত দায়ভার লেখকের, সংবাদ একলব্য এক্ষেত্রে কোনভাবেই দায়বদ্ধ নয়
No comments:
Post a Comment