তুমিই দুনিয়ার বাস্তব যোদ্ধা
আরিফ হোসেন, মুখ্য সম্পাদক, সংবাদ একলব্য:
আজ ১২ই মে। আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। বিশ্ব গত ২০১৯-র শেষ লগ্ন থেকে মারণ ভাইরাস করোনার সাথে লড়ে আসছে। এই লড়াই মানব জাতির প্রান বাঁচানোর লড়াই। প্রথম থেকেই সেই লড়াইয়ের প্রথম সারির সৈনিক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। আজকের মানুষের কাছে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থায় কতটা গুরুত্ব নার্সদের ভূমিকা। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম- ত্যাগই আমাদের সুস্থ জীবনযাপন করতে সহায়তা করছে। তাঁদের ত্যাগ আপামর মানুষকে প্রিয়জন ত্যাগ থেকে রক্ষা করছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক সময়ই চিকিৎসক কিংবা নার্স- স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলার খবর পাওয়া যায়। অনেক ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতেও দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। আজ তারাই তাঁদের সর্বস্ব ত্যাগ করে মানব সমাজকে বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে। করোনার এই ভয়াল পরিস্থিতিতেও তাঁরা কর্তব্যে অবিচল। নিজের জীবন বাজি রেখে ঘর সংসার আনন্দ উল্লাস ত্যাগ করে অনবরত নিজেকে এই মহাযুদ্ধে সামিল করেছে তাঁদের প্রতি সামান্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন নিছক কিছু নয়। কিন্তু আর উপায় নেই। শুধু আজ নয়, শুধু এই মহামারী কালে নয় জীবনের প্রতিটি দিন আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
'ওঁরা জানে আজ, নয়তো কাল, যুদ্ধে তাঁদের আঘাত লাগতে পারে, তবুও ওঁরা সব মেনে যুদ্ধ করে, আমাদের বাঁচাতে।'
আসল সৈনিক আজ তাঁরাই যারা করোনা নামক এই অদৃশ্য শত্রুর হাতে নিজেকে শপে দিয়েছে মানব সভ্যতাকে বাঁচাতে। দীর্ঘ দুইটা বছর ধরে উঠে আসা নানা ইতিহাসে দেখা গিয়েছে কতটা কাতর যন্ত্রনা সহ্য করে রোগীদের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেছে চিকিৎসক- নার্স -স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছেড়েছে ঘর সংসার, প্রেমিক-প্রেমিকা আত্মীয় পরিজন। নেহাত বেতনের জন্য জীবনকে বলি দিতে নয় আপনার আমার সকলের আত্মীয় পরিজনদের করোনা মুক্ত জীবন দেখার তাগিদে। অথচ, আজও খবরের পাতায় ভেসে ওঠে চিকিৎসককে প্রহার কিংবা চিকিৎসক - নার্স - স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থার খবর। আমাদের কি তাঁদের প্রতি মায়া হওয়া উচিত নয় যারা নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে আমাদের জন্য লড়ছে?
কিছুদিন আগেই দুই চিকিৎসক বোনকে হেনস্থার কথা উঠে এসেছে, এর আগেও করোনা কালে উঠে এসেছে একাধিক হেনস্থার খবর। হ্যাঁ এটাও অনেকটা সত্য, যে চিকিৎসার নামে ব্যবসা করে একদল মানুষ। সেই দায়ে গোটা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত মানুষদের অপমান করা ঠিক নয়। একদল যেমন নোংরা খেলায় মেতেছে তেমনিই কিন্তু একদল মানুষের সেবায় নিয়োজিত হয়েছে। মানুষের প্রাণের চিন্তা সবার আগে প্রান যদি না থাকে ধন যশ খ্যাতি কিছুই লাভ নেই। সেই প্রানের চিন্তা না করে মাস্ক পড়ে, পিপিই পড়ে রোগীদের সেবায় ব্রতী হয়েছে।
দীর্ঘক্ষণ মাস্ক পড়ে পিপিই পড়ে কতটা যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়েছে তাঁদের সেকথাও কিন্তু উঠে এসেছে খবরের পাতায়। আমরা সচেতন নাগরিক তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যেন কোনোদিন ভুল না করি সেদিকেই আমাদের এখন সচেতন হতে হবে। 'ওঁদের ত্যাগ, আমাদের সুস্থতা'। 'ওঁদের ত্যাগ, আমাদের আনন্দ ভরা জীবনযাপন'। সেকথা ভুললে চলবে না। চলুন না একবার তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
করোনার এই লড়াইয়ে চিকিৎসক, নার্স থেকে স্বাস্থ্যকর্মী অনেকেই প্রান হারিয়েছে তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাক নিরন্তর। যারা এই লড়াইয়ে নিজেদের নিয়োজিত করে বেঁচে ফিরেছে তাঁদের প্রতিও থাক সম্মান , ভালোবাসা। এই বাস্তব দুনিয়ার আঙিনায় তোমরাই আসল সৈনিক। তোমরাই আসল সমাজসেবী, তোমারাই আসল যোদ্ধা। Thank You Nurse । ধন্যবাদ সেবিকা।
নার্সদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করতে প্রতিবছর ১২ ই মে আন্তর্জাতিক নার্স ও মিডওয়াইভস দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। এই দিনটিতে আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্ম বার্ষিকী।
COVID-19 মহামারীর কারণে হাসপাতালে ভর্তি বাড়ার সাথে সাথে নার্সরা সীমানা নির্বিশেষে প্রতিটি রোগীর যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এমনকি যদি কোনও রোগীর তাত্ক্ষণিক মনোযোগ বা কেবল কয়েকটি উত্সাহী শব্দের প্রয়োজন হয় তবে তাদের জন্য চব্বিশ ঘন্টা নার্স রয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে আরও ৯ মিলিয়ন নার্স ও মিডওয়াইফের প্রয়োজন, যাতে সমস্ত দেশ স্বাস্থ্য ও সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে তিন নম্বর স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন করতে পারে।
Save one life and you're a hero. Save a hundred lives and you're a nurse.
No comments:
Post a Comment