Latest Bengali News Portal

Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Sunday, January 8, 2023

Book Fair : ১ম কৃষ্ণনগর বইমেলা

১ম কৃষ্ণনগর বইমেলা


book fair


দীপাঞ্জন দে: ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে কৃষ্ণনগর পৌরসভার উদ্যোগে হয়ে গেল ১ম কৃষ্ণনগর বইমেলা। পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী এটি ছিল এক ঐতিহাসিক মেলা। এই বইমেলা ঘিরে কৃষ্ণনগর তথা জেলার মানুষদের উন্মাদনাও ছিল দেখার মতো। কৃষ্ণনগর তো বটেই নদিয়া জেলার ইতিহাসেও ১ম কৃষ্ণনগর বইমেলা নিশ্চয় বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে রইল।


এই প্রথম ‘কৃষ্ণনগর বইমেলা’ নাম নিয়ে কৃষ্ণনগর শহরে কৃষ্ণনগর পৌরসভার উদ্যোগে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। জেলা বইমেলা নিয়ে এক আকস্মিক সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এই ঐতিহাসিক নজির স্থাপিত হল কৃষ্ণনগরে। আসলে এপর্যন্ত প্রতিবছরই নদিয়া জেলা বইমেলা জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগরেই হতো, সেই ১৯৮৩ সাল থেকে যার শুরু। কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী প্রাঙ্গণ ছিল বইমেলার স্থায়ী ঠিকানা। দু-একবার যদিও বিশেষ কারণে বইমেলার স্থান পরিবর্তন হয়ে শহরের অন্যত্র যেমন— সি এম এস স্কুলের মাঠ, কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের মাঠ প্রভৃতি জায়গায় মেলা বসেছিল। আর এত বছরের মধ্যে কেবলমাত্র একবার কৃষ্ণনগর থেকে রানাঘাট শহরে জেলা বইমেলা স্থানান্তরিত হয়েছিল (৯ম নদিয়া জেলা বইমেলা, ১৯৯৪ সাল)। কিন্তু সেই ব্যতিক্রম বাদ দিলে কৃষ্ণনগরই ছিল নদিয়া জেলা বইমেলার স্থায়ী ঠিকানা।


book fair

তবে ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নদিয়া জেলা বইমেলা শান্তিপুরে চলে যায়। শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে ৩৮তম নদিয়া বইমেলা (১২-১৮ ডিসেম্বর, ২০২২) বসে। এহেন সরকারি ঘোষণায় শান্তিপুরের অধিকাংশ মানুষ বেজায় খুশি হলেও, কৃষ্ণনগর তথা জেলার বহু বইপ্রেমী মানুষ, সাধারণ জনগণ এতে মনঃক্ষুণ্ণ হন। যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধা এর অন্যতম কারণ ছিল। বইমেলা স্থানান্তরের কথা ঘোষণা হতেই সামাজিক গণমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। কিন্তু শান্তিপুরে জেলা বইমেলা করার সরকারি সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিতই থাকে। এই পরিস্থিতিতে কৃষ্ণনগরের সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় কৃষ্ণনগর পৌরসভা বইমেলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গেই রচিত হয় এক ইতিহাস।

book fair


কৃষ্ণনগর মিউনিসিপ্যালিটির ওয়েবসাইটে এই বইমেলা সম্পর্কে লেখা হয়— “কৃষ্ণনগরের ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, কৃষ্ণনগর শহরের নামে আজকে শুভারম্ভ ‘কৃষ্ণনগর বইমেলা’, উদ্যোগে কৃষ্ণনগর পৌরসভা।” ২০ ডিসেম্বর ২০২২ (মঙ্গলবার) কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে শুরু হয় ১ম কৃষ্ণনগর বইমেলা। সেদিন দুপুরে সকলে মিলে শহরের রাস্তায় পদযাত্রার মধ্যে দিয়ে মেলার সূচনা হয়। সাহিত্যিক তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষ্ণনগর বইমেলার শুভ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বহু বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন। ২০ থেকে ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত মোট সাতদিন ধরে কৃষ্ণনগর বইমেলা চলে। মেলার শেষদিন কৃষ্ণনগর পৌরসভার পৌরপ্রধান রীতা দাসের হাত দিয়ে ‘১ম কৃষ্ণনগর বইমেলা স্মরণিকা’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পায়। কৃষ্ণনগর বইমেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫৯টি প্রকাশনা সংস্থা নিজেদের বইয়ের স্টল নিয়ে হাজির হয়েছিল। এছাড়াও বেশ কয়েকটি সাধারণ স্টল ছিল। লিটল ম্যাগাজিনের জন্যেও একটি স্টল বরাদ্দ ছিল। সেখানে নদিয়া জেলা তো বটেই, জেলার বাইরের অনেক পত্র-পত্রিকাও এসেছিল। উড়িধান, প্রতিভা, বিজ্ঞান মেলা (দি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল), প্রকৃতি (ব্রেক থ্রু সায়েন্স সোসাইটি), বিজ্ঞান অন্বেষক (কাঁচরাপাড়া বিজ্ঞান দরবার), নদীয়া দর্পণ, জীবনকুচি, অনুরণন (মাটিয়ারী সাহিত্য পরিষদ), জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা (গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ), মুক্তমন মুক্তচিন্তা, গোবরডাঙা নবপর্যায়, গণিত ভাবনা, অন্যবাক, কবিতা কোণ, পথিক, সূর্যসেনার মতো একাধিক পত্রিকা লিটল ম্যাগাজিন স্টলে ছিল। উল্লেখ্য, ২৩ ডিসেম্বর জীবনকুচি পত্রিকার গ্রন্থাগার সংখ্যাটি বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন স্টলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পায়। প্রথম কৃষ্ণনগর বইমেলায় বই বিক্রি বেশ ভালোই হয়। বইমেলা কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী মোট ৫১ লক্ষ টাকার বই এই মেলা থেকে বিক্রি হয়েছে।




প্রথম কৃষ্ণনগর বইমেলায় বিশিষ্ট চিত্র সাংবাদিক প্রয়াত সত্যেন মণ্ডলের নামাঙ্কিত একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে অন্যান্য ছবির পাশাপাশি সত্যেন মণ্ডলের নিজের তোলা কয়েকটি সাদাকালো ছবিও প্রদর্শিত হয়। উল্লেখ্য, প্রথম কৃষ্ণনগর বইমেলার একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বইমেলার মূল মঞ্চে সন্ধ্যেবেলায় নামিদামি শিল্পীদের দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেইসব বিশিষ্ট শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন জগন্নাথ বসু, ঊর্মিমালা বসু, শ্রীকান্ত আচার্য, লগ্নজিতা, মনোজ মুরলী নায়ার প্রমুখরা। ২১ থেকে ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে বইমেলায় কবি সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয়েছিল। এছাড়া বইমেলার পরম্পরা অক্ষুণ্ন রেখে কৃষ্ণনগর বইমেলা কমিটির পরিচালনায় ২২, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর এই তিনদিন বিকেল চারটে থেকে আলোচনা চক্র (সেমিনার) অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনই কৃষ্ণনগর বিষয়ক আলোচনা রাখা হয়েছিল। প্রথম দিনের বিষয় ছিল ‘কৃষ্ণনগরের সেকাল-একাল’, বক্তা ছিলেন স্বদেশ রায়। দ্বিতীয় দিনের বিষয় ছিল ‘পণ্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র কৃষ্ণনগর’, বক্তা ছিলেন শিবনাথ চৌধুরী। আর তৃতীয় দিনের আলোচনা চক্রের বিষয় ছিল ‘কৃষ্ণনগরে বিদ্যাসাগর’, বক্তা ছিলেন বিদ্যাসাগরের বংশের অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়।




১ম কৃষ্ণনগর বইমেলার মূল মঞ্চটি সাহিত্যিক সুধীর চক্রবর্তীর নামে করা হয়েছিল। আর বইমেলার মূল প্রবেশ তোরণটি ছিল কৃষ্ণনগরের প্রয়াত বিধায়ক অবনীমোহন জোয়ারদারের স্মরণে। কৃষ্ণনগর বইমেলার পঞ্চম দিন অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ (শনিবার) সুধীর চক্রবর্তী নামাঙ্কিত মঞ্চ থেকে প্রকাশ পায় পরিবেশ পত্রিকা ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা'-র নতুন সংখ্যাটি। এটি এই পত্রিকার তৃতীয় বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২২)। সেই সময় বইমেলার মূল মঞ্চে কবি সম্মেলন চলছিল। মঞ্চে উপস্থিত বিশিষ্ট কবি, লেখকদের সামনেই এদিন ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা'র নতুন সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়। পরিবেশ পত্রিকা ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা'-র নতুন সংখ্যাটির আবরণ উন্মোচন করেন বিশিষ্ট কৃষ্ণনাগরিক রবীন্দ্রপ্রাণ সম্পদনারায়ণ ধর। পত্রিকাটি প্রকাশ করে তিনি বলেন, “জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা পত্রিকাটির সঙ্গে আমি আগে থেকেই পরিচিত। পত্রিকার আগের সংখ্যাগুলিও আমি দেখেছি। আমার খুব ভালো লেগেছে। নতুন সংখ্যাটিও আশাকরি ভালোই হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে এই ধরনের পরিবেশ পত্রিকা আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন বলে মনে করি।” পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন বিশিষ্ট কবি রামকৃষ্ণ দে। তিনি ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা'-র নতুন সংখ্যাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় সকলের সামনে তুলে ধরেন। পত্রিকা প্রকাশের সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা'-র সম্পাদক দীপাঞ্জন দে। তিনি কৃষ্ণনগর বইমেলা কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে পত্রিকার নতুন সংখ্যাটি সম্পর্কে দু-একটি কথা সকলকে জানান। উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ থেকে তিন মাস অন্তর এই পরিবেশ পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটিতে পরিবেশের বিভিন্ন খবরা-খবরের পাশাপাশি রাজ্য তথা দেশের পরিবেশ আন্দোলনগুলির কথা মুদ্রিত হয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পরিবেশকর্মী, বিজ্ঞানকর্মী, পরিবেশ লেখকেরা এই পত্রিকার সাথে জড়িত। ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’-র তৃতীয় বর্ষের চতুর্থ সংখ্যাটি প্রথম কৃষ্ণনগর বইমেলায় প্রকাশিত হয়, যেটিও এক ইতিহাস হয়ে রইল।




লেখক: সম্পাদক, ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages