গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিবর্তন জরুরি নয় কি?
মহীদাস ভট্টাচার্য্য
‘গণ’-এর স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রশাসনের অপব্যবহারের সম্ভাবনা সামলাতেই ‘তন্ত্র’এর যোগ। তবুও ‘ছিল রুমাল ও হয়ে গেল বেড়াল’ চলছে কী করে? তাহলে গণতন্ত্রের মধ্যেই কি দুর্নীতি অনুশীলনের চোরাগলি রয়েছে? ভোটারদের ধরাছোঁয়ার বাইরে, কিন্তু রাজনীতিজীবিদের মুখ্যাংশ সেই চোরাগলিতে দক্ষ হয়ে উঠেছে। চলছে গণতন্ত্র দিয়েই গণতন্ত্র-হত্যার অশ্বমেধ। নির্বাচিত হয়ে যে যত উপরে সে তত বেশি দক্ষ সেখানে। একদলীয় আধিপত্যের মরণপণ পৈশী-প্রয়াস। মসনদ প্রত্যাশী কুশীলবদের ঝটিকা সফরে, কুবাক্যে, দলীয় ও রাষ্ট্রীয় পেশীর কুনাট্যে হতভম্ব নির্বাচকমণ্ডলীর পাদপিষ্টের সম্ভাবনা।
সংবিধানে মাথা ঠুকে সততা ও নিরপেক্ষতার সাংবিধানিক শপথে সিংহাসন দখল। তারপরেই শুরু শপথভ্রষ্টের কর্মযজ্ঞ। সংবিধান এই অপ-সুযোগ আটকাতে ব্যর্থ কি? দূরদর্শনের বিশেষজ্ঞেরা জানেন। মন্ত্রীত্বের চেয়ারে বসে প্রশাসনিক সুযোগ নিয়ে দলীয় রাজনীতির অনুশীলন - এ তো দ্বিচারিতা? সরকারী সুখভোগ করে চলছে দলীয় কর্মীসভা বা অফিস উদ্বোধন। কেন? বেলা ১.৩০ পর্ষন্ত মন্ত্রী, ১.৩১-এ দলের রোডশোর আবার সন্ধ্যে ৬.০৫-এ প্রেসমিট-এ মন্ত্রী। এতো চুড়ান্ত অসততা।
দাবি – টাকা ‘আমরা’ দিয়েছি। ‘টাকা তো জনগণের। সঠিকভাবে দেওয়াই সাংবিধানিক দায়িত্ব। তার বিনিময়ে ভোট চাওয়া তো নির্বাচনবিধি ভঙ্গ। এর উপর সেন্সর আরোপের সুযোগ থাকা উচিত সংবিধানে। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ‘(of/for/by the) people’র দ্বারাই নির্বাচিত নির্দিষ্ট কর্মসূচীর জন্য। তার বাইরে যেমন খুশি দেশের সম্পদের বেচাকেনা। সাংসদ-বিধায়ক বা এই জাতীয় পদগুলির place value-র অবমাননা, বেচাকেনা প্রকাশ্যে চলবে? মহামান্য আদালতগুলি কিসের জন্য? সেগুলি স্বত:প্রণোদিত হয়ে অপরাধী ঘোষণা করবে না কেন? সাধারণমানুষকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঠকিয়ে যাবে রাজনীতিজীবিরা সংবিধানের নাম করে। এতো সংবিধানের অন্যতম সীমাবদ্ধতা।
দলবদল চলছে। জনতাজনার্দনের সেবার জন্য পাগল হয়ে, রাজনৈতিক সংলাপে মিথ্যাচার, প্রশাসনে অমানবিকত, অর্থনীতিতে দুর্নীতি, মতাদর্শ অনুশীলনে crime এসবের নায়ক যারা তাদের নিরাপত্তায় জনগণের টাকায় লালিত রাষ্টীয় পাহারা। এসব চলতে দেবে কেন গণতন্ত্র? মিথ্যা-বিজ্ঞাপনে শাস্তি হয়, মিথ্যা-প্রতিশ্রুতিতে হবে না? কেন পুনর্নিবাচনের সুযোগ কেড়ে নেওয়া হবে না এদের?
গৃহস্থের দোষেই তস্করেরা লুঠ করে। দেশে নাগরিকরাই গৃহস্থ। একদলীয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের জমজমাট অন্ধকার তৈরিতে সায় পাচ্ছে এই গণতন্ত্রে। রুমাল বেড়াল হয়ে হায়েনার রূপ নিচ্ছে। গায়ে দগদগে আঁচড় টানার আগে গার্হস্থ্যজীবিদেরকেই গণতন্ত্রের চোরাগলি বুঝে নিতে হবে। তা না হলে আবার একবার আমাদের জীবনযন্ত্রণা, অভিযোগকে পুঁজিকরে অনাকাংক্ষিত রক্তক্ষয়ী শক্তি সমৃদ্ধ হবে, কিন্তু কোনো সংকটই দূর হবে না। নীরবতাও রাজনীতি, কৌশলী ও সুবিধাভোগী রাজনীতিজীবিদের জন্ম দেয়। গণতন্ত্র-মেধ নিশ্চিত হয়ে যায় তাতে। তা করতে দেবেন কি?
No comments:
Post a Comment