আসুন এবার তাদের কথা ভাবি
বিধানসভা নির্বাচন শেষ। রণ দুন্দুভি আর ডঙ্কা নিনাদের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এক, দুই নয়, অষ্টম দফা নির্বাচনের শেষ পর্ব। আগামী 2 তারিখে ফল প্রকাশ। তারপর শুরু হবে নতুন সরকার গঠনের উন্মাদনা। মাঝখানের এই দুই দিন আসুন তাদের কথা ভাবি।
তারা সংখ্যায় কুড়ি লক্ষাধিক। হ্যাঁ, ঠিকই অনুমান করেছেন, আমি পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কথাই বলছি। করোনার করাল থাবায় বন্ধ হয়ে গেছে তাদের পরীক্ষা। যে পরীক্ষাদ্বয় ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে হওয়ার কথা ছিল তা শুরু হওয়ার কথা জুন মাসে। কিন্তু যেভাবে বিধ্বংসী করোনা তার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে, তাতে করে কি হবে বলা কঠিন। চারিদিকে শুধু ত্রাহি ত্রাহি রব। এজন্য আমরাও কম দায়ী নই। একের পর এক রোডশো, মিটিং-মিছিল, জমায়েত আর নির্বাচন কমিশনের ডিসি আরসিতে যেভাবে লোক সমাগম হয়েছিল তাতে করে নির্দ্বিধায় বলা যেতেই পারে যে এটাই হওয়ার ছিল। দুঃখের কথা এখনো কিছু লোকের এমন ভাব যে মাস্ক পরে কি হবে? সোশ্যাল ডিসটেন্স তো তাদের কাছে হাসির ব্যাপার মাত্র। এর ফল তো আমাদের ভোগ করতেই হবে।
এমতাবস্থায় ফ্রন্ট লাইনে যারা কাজ করছেন সেই সব ডাক্তার, নার্স আর সাফাই কর্মীদের ছুটি তো পরের কথা নাওয়া খাওয়া বন্ধ করলে ভালো হয়।
তবুও বলবো আসুন আমরা এবার মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কথা একটু ভাবি। অনলাইনে পরীক্ষা নিলে বা অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে পরের ক্লাসে তাদের উন্নীত করে দেওয়ার অর্থ হবে তাদেরকে হাস্যস্পদ করে তোলা। কারণ আজীবন তাদেরকে শুনে যেতে হবে, "ও তোমরা 2021 সালে মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছ? এ তো পড়ে পাওয়া আট আনার মতো ফাও নম্বর।" তাদের এই গ্লানি আর অপবাদের হাত থেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় পরীক্ষা দুটো নেওয়া। হ্যাঁ এজন্য অবশ্যই আমাদের ভাবতে হবে কিভাবে তা করা যেতে পারে। যুক্তি হিসেবে বলা যায় যদি বিধি মেনে নির্বাচন করা যেতে পারে তাহলে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না কেন?
সবচাইতে বড় কথা ক্রমে এইসব পরীক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়ছে। তারা শুরুও করতে পারছে না পরের ক্লাসের পড়া। তাদের জীবনে এ এক চরম অনিশ্চয়তা।
মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা কাউন্সিল অনুগ্রহ করে ভেবে দেখুন। এ বিষয়ে আমি একটা উপায়ের উল্লেখ করতে পারি এবং তা হল: ১.প্রতিটি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে হোম সেন্টার করে পরীক্ষা নেওয়া হোক।
২.পরীক্ষার দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মী ছাড়া অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকাগণ নিজ নিজ বিদ্যালয়ে যেতে পারবেন না।
৩.অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা পাশের বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কাজ সম্পন্ন করবেন।
৪. এজন্য সরকারকে পরীক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা বা অন্যত্র পরীক্ষা কেন্দ্র করার ব্যাপারে মাথা ঘামাতে হবে না।
৫.সেক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের বাবা-মা বা অন্য কাউকে পরীক্ষার হলে যেতে দেওয়া হবে না।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্ভবত তারা যাবেও না কারণ মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক প্রায় সকল ছাত্র ছাত্রী নিজেরা একাই তাদের বিদ্যালয়ে যায়।
৫. প্রশাসন শুধুমাত্র পরীক্ষার হলে প্রশ্ন দিয়ে আসা এবং উত্তরপত্র নিয়ে আসার কাজ করবে। এজন্য বিদ্যালয় পিছু যে মুষ্টিমেয় পুলিশের ব্যবস্থা করতে হবে, ইচ্ছা করলে প্রশাসন তা অতি সহজেই করতে পারবে।
৬. এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে যতজন মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে তার চাইতে বেশি সংখ্যক বেঞ্চ সেই বিদ্যালয় আছেই।তাই প্রতিটা বেঞ্চে কোনাকুনি একজন করে পরীক্ষার্থী বসিয়ে কোভিড বিধি মেনে, সোশ্যাল ডিসটেন্স মেনটেন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।
সকল পরীক্ষার্থীদের অভিভাবক অভিভাবিকারা এ বিষয়ে ভাবুন। কোমলমতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এই উত্তরাধিকারদের অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার নাম করে যেন হাস্যস্পদ করে না তোলা হয়।
যে দলই জিতুক না কেন দুই তারিখের পর থেকেই শুরু হয়ে যাবে নতুন সরকার গঠনের তোড়জোড়।নতুন সরকারের শিক্ষামন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই প্রতিবেদককের আগাম অনুরোধ রইল এ বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত যে ইতিবাচক সেই সিদ্ধান্ত নতুন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। তাই এটাকে অবহেলা করবেন না।
Khub valuable essay.
ReplyDelete