Latest Bengali News Portal

Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Monday, April 26, 2021

চলে গেলেন অধ্যাপক বিকাশ রায়, শোকের ছায়া শিক্ষামহলে- স্মৃতিচারণায় গবেষক সঞ্জীবন মণ্ডল



চলে গেলেন অধ্যাপক বিকাশ রায়, শোকের ছায়া শিক্ষামহলে- স্মৃতিচারণায় গবেষক সঞ্জীবন মণ্ডল


অসংখ্য গুণমুগ্ধ ও প্রচুর শুভাকাঙ্ক্ষীদের ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন অধ্যাপক বিকাশ রায়। অকালে করোনা কেড়ে নিল মহতি এই অধ্যাপককে। সদাহাস্য ও পরোপকারী অধ্যাপক বিকাশ রায়ের জন্ম মালদা জেলায়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করে সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। কিছুদিন কলকাতায় নেতাজী সুভাষ ওপেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে ২০০৯ সালে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।

স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার জন্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন ‘সুলতা দত্ত মেমোরিয়াল প্রাইজ’ ও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, শিলিগুড়ি শাখা তাঁকে বিশেষ সম্মানে সম্মানিত করেছে। ‘কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরী ও গবেষণা কেন্দ্র’ থেকে বিশেষ গবেষক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। ‘সাহিত্য প্রেষণা’ পত্রিকার তরফ থেকে পেয়েছেন ‘সাহিত্য সমালোচক সম্মান’। ২০১৯ এ ‘প্রিয়জনেষু’ সংস্থা থেকে পেয়েছেন ‘সাহিত্যকৃতি’ সম্মান। শিলিগুড়িস্থিত ‘উত্তরবঙ্গ নাট্যজগৎ’ থেকে পেয়েছেন ‘নাট্য গবেষক পুরস্কার। এছাড়াও গবেষণা অভিসন্দর্ভের জন্য কলকাতার ফেরী (FERI) গবেষণা সংস্থা তাঁকে প্রদান করেছেন-‘অদ্বৈত মল্লবর্মণ পুরস্কার’।তিনি নিজে সম্পাদনা করতেন ‘রৌদ্র ছায়া’ পত্রিকা।সেই পত্রিকায় তিনি নিজে যেমন লিখতেন তেমনি অন্যান্য গবেষকদেরও সমান সুযোগ দিতেন। মৌলিক ও সম্পাদিত গ্রন্থ মিলিয়ে তিনি প্রায় ২০ খানি বই প্রকাশনা করেছেন।তিনি শুধু অধ্যাপক ও সমালোচকই ছিলেন না; ছিলেন একজন কবি। তাঁর ‘ঝরাপাতার বাণ্ডিল’ কাব্য সংকলনটি পাঠক সমাজে বেশ সমাদৃত হয়েছে।

অধ্যাপক বিকাশ রায়কে প্রথম দেখেছিলাম ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত একটি কর্মশালায়। সেই কর্মশালাতেই অধ্যাপক প্রকাশ মাইতি ও অধ্যাপক তন্ময় বীর মহাশয় পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন স্যারের সাথে।তারপর স্যারের সাথে একটা হৃদ্যতা সম্পর্ক গড়ে উঠে। মূলত উনার দৌলতেই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ক্লাসে অন্যান্য ছাত্রছাত্রী ও গবেষকদের সাথে ওঁনার বক্তব্য শুনার সৌভাগ্য হয়েছিল কয়েকবার। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত দেশভাগ বিষয়ক সেমিনারে ওঁনার সান্নিধ্যেই প্রথম পেপার প্রেজেণ্ট করেছিলাম।মালদা শহরে ওঁনার এক কামড়ার ভাড়া বাড়িতেও অন্যান্য গবেষকদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডার আসরে বসে স্যারের আলোচনা শুনেছি।গত ২০১৯ এ ভুবনেশ্বরে অপর একটি সাতদিনের কর্মশালায় তিনি এসেছিলেন। অধ্যাপক উৎপল মণ্ডল, অধ্যাপক সুখেন বিশ্বাস, অধ্যাপক নবগোপাল রায় মহাশয়েরা সেই কর্মশালায় উপস্থিত থাকলেও সকলের সিনিয়র অধ্যাপক বিকাশ রায় মহাশয় কর্মশালাটি পরিচালনা করেছিলেন। সেই কর্মশালা উপলক্ষ্যে সারাদিনের কাজের শেষে রাত্রে বেলা স্যারেরা যখন হোটেলে বিশ্রাম করতেন সেখানেও আমাদের প্রবেশাধিকার ছিল। সেই সময়ই আমি রাহুল সাহানা অন্যান্য অধ্যাপকদের পাশাপাশি বিকাশ স্যারের রুমেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়েছি।কর্মশালা শেষ হলে স্যার-ই আমাকে ও রাহুল সাহানাকে শতাব্দী এক্সপ্রেসে করে কলকাতা নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানেও স্যারের সাথেই কলেজ স্ট্রীটে বই কেনাকাটা করে কফি হাউসে বসেছিলাম।

অধ্যাপক বিকাশ রায় গল্প করতে ও বিভিন্ন রকম খাবার খেতে ভীষণ পছন্দ করতেন। তিনি ছিলেন একজন ছাত্র দরদী অধ্যাপক। অধ্যাপককে হারিয়ে আমরা শোকাহত। স্যারের আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages