কার্টুনের মাধ্যমে শিক্ষাদানে ‘অনলাইন টিচিং’ এর অভিনব উদ্যোগ
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঠাকুরনগর : উত্তর ২৪ পরগণা জেলার গাইঘাটা সার্কেলের ‘অনলাইন টিচিং’ নামক অরাজনৈতিক সংস্থা করোনা ভাইরাস জনিত লকডাউনের কারণে প্রাথমিক শিক্ষায় শিশু শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে এবং স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা যাতে বৃদ্ধি না পায় সেই দিকে লক্ষ্য রেখে এক অভিনব পদ্ধতির মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। যদিও গত ২০২০ এর ১৮ মে ড. অরূপ মজুমদারের উদ্যোগে এই সংস্থাটি গড়ে উঠেছিল এবং ধীরে ধীরে এই সংস্থার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৫০ পার হয়ে গেছে এবং গ্রামবাংলার বিভিন্ন সার্কেলে এই সংস্থা শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছে।
লকডাউনে পড়াশুনা সচল রাখতে এবং স্কুলছুট শিক্ষার্থীদের পুনরায় পঠনপাঠনমুখী করতে তাঁরা মূলত দুটি পন্থার সাহায্য নিয়েছিলেন। অনলাইনের সাহায্যে যেমন প্রত্যেক দিন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে বিভিন্ন উৎসাহিত শিক্ষক শিক্ষিকারা নিয়োজিত ছিলেন, তেমনি করোনাবিধি মেনেও সপ্তাহে তিনদিন গাইঘাটা ব্লকের প্রায় সমস্ত গ্রামে ছাত্রছাত্রীদের সামনা সামনি পড়ানোর ব্যবস্থা জারি ছিল।এক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষিকারা দলগতভাবে নিজগৃহ থেকে কাছাকাছি গ্রামগুলির দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু এই পদ্ধতির প্রথম ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ইণ্টারনেট, মোবাইল প্রভৃতি প্রধান উপাদানগুলির। কেননা সব শিশু শিক্ষার্থীদের বাড়িতে যেমন এনড্রোয়েট মোবাইল নেই, তেমনি অনেকের নেটওয়ার্কগত সমস্যার পাশাপাশি মোবাইল রিচার্জগত সমস্যাও রয়েছে। ফলে সরাসরি সম্প্রচারিত ক্লাসগুলিতে অনেক শিক্ষার্থীই ক্লাস করতে পারছিলনা।
বর্তমান সময়ের পরিস্থিত বিচার করে এই সংস্থার প্রধান এডমিন ড. অরূপ মজুমদার আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কার্টুনের মাধ্যমে আনন্দদায়ক ক্লাসরুম তৈরি করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে উদ্যোগ নিয়েছেন।যার প্রধান শিক্ষক পদে রয়েছেন পল্টু নামক একজন আকর্ষণীয় চরিত্রের কার্টুন। ছাত্রছাত্রীদেরও তিনি কার্টুনের মাধ্যমে ভীষণ আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তুলেছেন।প্রত্যেকদিন সেই কার্টুন চরিত্রের ক্লাসগুলি সংস্থার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক ও ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে শিশু শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে এবং শিশু শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধামতো সেগুলি দেখে শিক্ষালাভ করছে। শিশুরা তো কার্টুন দেখতে ভীষণ পছন্দ করে- এই কার্যকরী তত্ত্বই ড. অরূপ মজুমদার প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন। সেই কার্টুনের মাধ্যমে রঙ্গিন হাস্যচ্ছ্বল ক্লাসরুমের ভিডিওগুলি সম্প্রচারের ফলে অভিভাবকরাও শিশুদের সেই কার্টুন দেখতে উৎসাহিত করছে ।
এই প্রসঙ্গে অভিভাবকরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে- মনস্তত্বগত দিক থেকেও কার্টুনের মাধ্যমে শিশু শিক্ষা বাস্তব ও সময়োপযোগী। এই ক্ষেত্রে কালাঞ্চী জুনিওর বেসিক স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা বৃন্দ এবং শিক্ষক অজয় নিয়োগী, তুহীন সরকার, বীতেন সরকার, বাবুলাল সরকার, শিক্ষিকা লিপিকা সোম, মৌসুমী বিশ্বাস, তৃপ্তিকণা সরকার, রত্না সাহা, সায়ন্তনী রায়, ঝুমা চ্যাটার্জী প্রমুখেরা নিরলসভাবে কাজ করে চলছেন।সংস্থার প্রধান এডমিন ড. অরূপ মজুমদার জানিয়েছেন যে- ‘শিক্ষাবিজ্ঞান থেকে তিনি এই ধারণাটা পান এবং প্রয়োগ করেন। শিক্ষার্থীদের সাড়াও মিলছে স্বতস্ফূর্তভাবে’। আগামীদিনে এই পদ্ধতিকে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে তিনি অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে আবেদনও রেখেছেন।
No comments:
Post a Comment