Latest Bengali News Portal

Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Monday, October 31, 2022

প্রকৃতিরক্ষক দেবল দেব এবং তাঁর ‘বসুধা’

প্রকৃতিরক্ষক দেবল দেব এবং তাঁর ‘বসুধা’



some men with book




দীপাঞ্জন দে: গ্রামের মানুষদের কাছে জায়গাটি এক কথায় ‘কৃষিবিজ্ঞান’ নামে পরিচিত। পুরো নামটি হল ‘বসুধা — আরণ্য কৃষি কেন্দ্র’। বাঁকুড়া জেলার বিনোদবাটি গ্রাম— জঙ্গল এলাকা। সেখানেই দেশীয় প্রজাতির গাছগাছালিতে ভরপুর একখণ্ড জায়গা। প্রায় ৯-১০ বিঘা বলা যেতে পারে। পরিবেশবিদ দেবল দেব জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় সেখানে ‘বসুধা — আরণ্য কৃষি কেন্দ্র’ গড়ে তুলেছেন। প্রকৃতি পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য দেবল দেবের দীর্ঘ সংগ্রামের কথা অনেকেরই জানা। তাঁর সেই নিরলস সংগ্রামেরই স্থায়ী রূপ হল বাঁকুড়া জেলার বিনোদবাটি গ্রামের ‘বসুধা’।

one man with book

বসুধায় দেবল দেব এমন এক পরিকাঠামো তৈরি করেছেন, যেখানে জৈবকৃষি পদ্ধতিতে চাষবাস, দেশীয় প্রজাতির গাছপালা সংরক্ষণ, ইকোলজিকাল আর্কিটেকচার, সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন, জল সংরক্ষণ, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, ইকোলজিক্যাল স্যানিটেশন প্রভৃতি ব্যবহারিকভাবে প্রদর্শিত হয়। বসুধা — আরণ্য কৃষি কেন্দ্রে গাব, করঞ্জ, মহুয়া, অনন্তমূল, সৎমূল, দুধেলতা, লেদা, কদম, আমলকী, শেওড়া, বহেড়া, নিম, মহানিম, শাল, সজিনা, গামার, পাকুড়, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, বাগান শিরীষ, শিমুল, গুড়মার, বকুল, চালতা, পাকুড়, পিপুল, ছাতিম, পান, লাল শিরীষ, শ্বেত শিরীষ, ধঞ্চে, ময়না মন্তা, আঁচ, মহানিম, বেঁচকুল, খুদিজাম, ডুমুর, শেওড়া, চুর্চুমনের মতো অসংখ্য দেশীয় প্রজাতির গাছপালা দেখতে পাওয়া যায়।

বসুধা হল স্থানীয় সম্পদ-ভিত্তিক সম্প্রদায় উন্নয়নের একটি ক্ষুদ্র মডেল, যেখানে গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য সহায়ক স্থানীয় সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টায় বসুধা গ্রামবাসীদের উৎসাহ দিয়ে থাকে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় যে, দেবল দেবের নেতৃত্বে সিআইএস স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী স্যাক্রেড গ্রোভস (পবিত্র থান) এবং পবিত্র পুকুর, যেগুলি বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল, সেগুলি চিহ্নিতকরণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। সিআইএস দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের কর্মশালারও আয়োজন করে। শস্যের জিনগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক কৃষি কৌশল, জীববৈচিত্র্যের নথি প্রস্তুত প্রভৃতি বিষয়ে কৃষক ও বিভিন্ন এনজিওকে তারা প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে।

বসুধার যে দোতলা মাটির বাড়ি, সেটির কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। বিজ্ঞানী থেকে গবেষক, শিক্ষক বা ছাত্র-ছাত্রী যারাই বসুধায় গিয়েছেন, তারাই এই মাটির বাড়িতে থেকেছেন নিশ্চয়। সম্পূর্ণ স্থানীয় পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতিতে মাটির বাড়িটি তৈরি হয়েছে। বাড়িটি তৈরি করতে কোনো পোড়ানো ইট, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, কাঠ ব্যবহার করা হয়নি। চিরাচরিত দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে মাটির বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। তালের কড়ি বর্গা, বাঁশ, সূর্যের আলোয় শোকানো ইট, বিচুলি খড়, কাঁচা মাটি প্রভৃতি দিয়ে বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। এটি তৈরির জন্য কোনো গ্রীন হাউজ গ্যাস উৎপন্ন হয়নি। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। যেমন সূর্যের অবস্থানকে মাথায় রেখে এমনভাবে বাড়িটির পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে গ্রীষ্মকালে বাড়ির জানালা দরজা দিয়ে সূর্যালোক কম ঢোকে এবং তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। আর অন্যদিকে শীতকালে যাতে সূর্যালোক বেশি ঢুকে ঘরগুলিকে গরম রাখতে পারে। সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পরিবেশ পত্রিকা ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’য় বহুবার প্রকৃতিরক্ষক দেবল দেব এবং তাঁর আন্দোলনের কথা প্রকাশিত হয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে নদিয়া জেলার পরিবেশকর্মীদের একটি দল বসুধায় গিয়েছিলেন। সেই দলে ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’-র প্রতিনিধিরাও ছিলেন। তাদের পক্ষ থেকে ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’ (Bio-diversity Conservation News Letter)’-র বিগত সংখ্যাটি সেখানে দেবল দেবের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’-র প্রথম সংখ্যা থেকেই তিনি এক প্রকার এর সঙ্গে যুক্ত আছেন। পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি দেবল দেবের হাতেই উন্মোচিত হয়েছিল, অনুষ্ঠানটি হয়েছিল গোবরডাঙা গবেষণা পরিষদে। প্রথম সংখ্যাটির প্রচ্ছদে ছিল উড়িষ্যার বসুধা কৃষি খামারের ছবি। আর সেই সংখ্যার দ্বিতীয় প্রচ্ছদে ছিল দেবল দেবের আন্দোলনের কথা। সঙ্গে তাঁর ছবিও মুদ্রিত ছিল। ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’-র তৃতীয় বর্ষের তৃতীয় সংখ্যাতেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২২) বসুধার কথা রয়েছে, প্রচ্ছদেও রয়েছেন প্রকৃতিরক্ষক দেবল দেব। সেই সংখ্যাটিই এদিন দেবল দেবকে প্রদান করা হয়। প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য তাঁর দীর্ঘ আন্দোলন থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার রয়েছে। দেবল দেবের মতো পরিবেশ সংরক্ষককে ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’-র পক্ষ থেকে রইল সংগ্রামী অভিনন্দন।




লেখক: সম্পাদক, ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages