Latest Bengali News Portal

Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Thursday, March 25, 2021

ভাষিক-সম্রাজ্যবাদ না একুশে ফেব্রুয়ারি ? মহীদাস ভট্টাচার্য্য, প্রাক্তন অধ্যাপক ও ডিরেক্টর ভাষাতত্ত্ব বিভাগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

 


ভাষিক-সম্রাজ্যবাদ না একুশে ফেব্রুয়ারি ? 

মহীদাস ভট্টাচার্য্য, প্রাক্তন অধ্যাপক ও ডিরেক্টর 

ভাষাতত্ত্ব বিভাগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় 




যাদবপুর ইণ্ডিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স এদেশে আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা করেছিল ১৮৭৬-এ । গোটা ব্যাপারটি বঙ্গভাষীর কল্পনাপ্রসূত, তাঁদেরই অবদানে সমৃদ্ধ। মহেন্দ্রলাল সরকার, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেন, গুরুদাস ব্যানার্জী, আশুতোষ মুখার্জী, চুণীলাল বসু, সুরেন্দ্র নাথ ব্যানার্জী, প্রমথনাথ বসু, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রমুখ বহু বঙ্গভাষীর শ্রম রয়েছে এখানে। সিভি রমন, মেঘনাদ সাহ-দের মতো বহু বিজ্ঞানী এই প্রতিষ্ঠানকে ও দেশকে গৌরবে ভূষিত করেছেন বিশ্বে।

 

সেখানে ভারত সরকারের মিনিস্ট্রি অফ হোম এফিয়ার্স. ডিপার্টমেন্ট অফ অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে নির্দেশ এসেছে যে এই প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম হিন্দিতে করতে হবে। যেভাবে এসেছে তাতে বঙ্গভাষী হিসেবে অত্যন্ত বেদনাবোধ করি। কারণ তা বঙ্গভাষীর অবদানকে উদ্ধত্যের সঙ্গে উপেক্ষা করার বার্তা বহন করছে। প্রশ্ন ওঠে -এই উদ্যোগ কেন? জ্ঞানানুশীলনে তো প্রতিষ্ঠানটির কোনো সমস্যা হয়নি এ যাবৎ। তবুও ভাষার ওপর আঘাত কেন? তাহলে কি নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি-২০-র প্রয়োগ শুরু হল? কারণ সেখানে মাতৃভাষার উল্লেখ থাকলেও কৌশলে হিন্দি ভাষার আধিপত্য বিস্তারের নানা কৌশলী আয়োজন স্পষ্ট হয়েছে। 



বাংলাভাষা বহুদিন উপেক্ষিত থেকেছে বাংলায়, ব্রাহ্মণ্যবাদ ও ইসলামী শাসনযন্ত্রের জাঁতাকলে অর্গলবদ্ধ হয়ে পড়েছিল । বাঙালীরা নিজেরাই অর্গল মুক্ত করেছে নতুন মনীষার আলোকে। কারুরই কোনো অবদান নেই সেখানে। বাঙালীর আত্ম-অনুশীলনের নিজস্ব সম্পদ তার ভাষা, ভাবনা নতুন যুগের সংস্কৃতি। তার প্রতি এই উপেক্ষা কেন? 




এছাড়াও নির্বাচনের মুখেই এটি সামনে রেখে ঘোষণা কেন? বর্তমান রাজ্যে প্রশাসনিক জটিলতা আর লকডাউনের পরিকল্পনাও প্রবল। অন্যদিকে মোহগ্রস্ত বঙ্গসন্তানসন্ততিরা লাভলোকসানের বিলাসে ভেসে যুক্তিহীন নির্বাচনী রাজনীতির অলীক-কুনাট্যে এখন মজে আছে। রোড শো আর মারামারি আর কুতর্কে। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার নয়তো? 



আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলায় এই ভাষানীতি প্রয়োগে সফল হলে শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য অনুসারে অন্যান্য সব মাতৃভাষাভাষীদের ওপর হিন্দির এই ভাষিক-সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্য জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসবে গোটা দেশে। এ চলতে দেওয়া যাবে কি? ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’-র অকাল বোধন দরকার হবে না তো? একদেশ, একভাষা, একধর্ম, একসরকার, একদল, একপ্রশাসন – এই সব পরিত্যক্ত নীতির বলি হবে কি সুনীতিবাবুর ভারতীয় জাতি-সত্ত্বার প্রধানভিত্তি – harmony of contrast. বৈসাদৃশ্যের ঐকতান? গাইবো নাকি 'আমরি মায়ের ভাষা'।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages