কুড়মালি ভাষাবিদ ও সাহিত্যিক পদ্মলোচন মাহাত’র তিরোধান দিবস উদযাপন
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া : মহামারী করোনার জন্য কুড়মি সমাজের ভাষাবিদ সাহিত্যিক শিক্ষক পদ্মলোচন মাহাত’র ১৬তম তিরোধান দিবস পালিত হল ভার্চুয়াল মাধ্যমে।সেখানে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুড়মি সমাজের বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত থেকে শিক্ষক ও ভাষাবিদ পদ্মলোচন মাহাত’র জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে পদ্মলোচন মাহাত কুড়মি সমাজের ভাষা ও সংস্কৃতি প্রসার প্রচার ও সংরক্ষণে সারাজীবন নিরলসভাবে কাজ করেছেন। এই সূত্রেই পঁচিশটি বর্ণমালার রূপ দিয়ে তিনি কুড়মালি লিপির প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। অন্যদিকে তিনি ‘কুড়মালি বেউরা’ নামক কুড়মালি ভাষায় ব্যাকরণ গ্রন্থ নির্মাণ করেছেন।মূলত তাঁর উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠা হয় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কুড়মালি একাডেমি’। যার সদর দপ্তর পুরুলিয়ায় অবস্থিত। বর্তমানে এই সংস্থাটি ভারতের সমস্ত কুড়মি সমাজের মধ্যে বিস্তার লাভ করেছে এবং ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নতিকল্পে কাজ করছে।সংগঠনের বর্তমান সদস্যরা চেষ্টা করছেন অন্যান্য জনজাতি ভিত্তিক উন্নয়ন পরিষদের মতো কুড়মালি উন্নয়ন পরিষদের সরকারি অনুমোদন আদায় করে ভাষা স্বীকৃতির।
আজকের ভার্চুয়াল আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন- আদিবাসী কুড়মি সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শশাঙ্ক শেখর মাহাত এবং সম্পাদক শ্রীযুক্ত ওমপ্রকাশ মাহাত মহাশয়। সেই সাথে ‘কুড়মালি ভাখি-চারি আখড়া’ ঝাড়খণ্ডের সম্পাদক মহাদেব মাহাত। আদিবাসী কুড়মি ঝাড়খণ্ড রাজ্যকমিটির সভাপতি শ্রীপ্রসেঞ্জীত মাহাত। আসাম কুড়মালি সাহিত্য সভার পক্ষ্য থেকে বক্তব্য রাখেন সম্পাদক সুরেশ কুড়মি মহাশয়।এছাড়াও ওড়িশ্যা থেকে উপস্থিত ছিলেন নবকিশোর মহন্ত, অধ্যাপক নন্দকিশোর মাহাত, চাস্ কলেজের অধ্যাপক পাণ্ডব পুনরিয়ার প্রভৃতি বিশিষ্ট ব্যক্তবর্গের পাশাপাশি ওয়েস্ট বেঙ্গল কুড়মালি একাদেমীর বর্তমান সম্পাদক শম্ভুনাথ মাহাত, কোষাধ্যক্ষ শক্তিপদ মহাশয় এবং অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।
কুড়মি সম্প্রদায় পুরুলিয়ার সংখ্যা গরিষ্ঠ জাতি হলেও এরা বর্তমানে ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশ্যা, আসাম, ছত্তিশগড় এবং পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলাতেই বসবাস করছেন। এদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি।বর্তমান সময়ে কুড়মালি ভাষায় প্রচুর সাহিত্যও তৈরি হচ্ছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগ থেকে গবেষক ড. অরূপ মজুমদার এবং তাঁর সহকারিদের তত্ত্বাবধানে ক্ষেত্রসমীক্ষার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে কুড়মালি হিন্দি ইংরেজী ত্রিভাষিক অভিধান। যে গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন অধ্যাপক অতনু সাহা মহাশয়। এছাড়াও অরূপ মজুমদার সম্পাদনা করেছেন ‘কুড়মালি রচিত’ নামক একটি গ্রন্থ। যেখানে কুড়মালি ভাষায় কুড়মি লেখকগণদ্বারা রচিত বিভিন্ন সাহিত্য উপাদান স্থান পেয়েছে।এছাড়াও ওয়েস্ট বেঙ্গল কুড়মালি একাদেমীর বর্তমান সম্পাদক শম্ভুনাথ মাহাত রচনা করেছেন কুড়মালি ভাষার পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ গ্রন্থ ‘ভাঁউঅর’।তাদের নিজস্ব ভাষাতেও নিয়মিত পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে।পুরুলিয়া ফরেস্ট মোড় মণিপুর পদ্মলোচন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কুড়মালি ভাষার বিস্তার ও প্রসারে বেসরকারিভাবে সিলেবাস ভিত্তিক পঠনপাঠনেরও ব্যবস্থা রয়েছে।যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়েছে-‘পদদঅ লোচন মাহাত কুড়মালি সিখনইত আখড়া’।
No comments:
Post a Comment