গঙ্গায় ভেসে আসা মৃতদেহ-পানীয় জলে করোনা!- গুজব রুখতে পথে নেমেছে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি
শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়া গুজবের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে পথে নামলো ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি নবদ্বীপ শাখা। মানুষকে সচেতন করতে শুরু হয়েছে পোস্টারিং। পাশাপাশি গুজব রুখতে নবদ্বীপ পৌরসভায় এবং নবদ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক মহাশয়কে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়।
সম্প্রতি করোনা আবহে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে গঙ্গায় মৃতদেহ ভেসে যাওয়ার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে বিভিন্ন অঞ্চলে নানারকমের গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। পৌরসভার পাইপ-লাইনের জলের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কায় অনেকেই তা পান করছেন না। অথচ গঙ্গার জল ' ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ' এর মাধ্যমে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পরিশোধন করে বাড়ি বাড়ি সে হঠাৎ করে নবদ্বীপ সহ নদিয়া জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে -- 'গঙ্গার জলে মৃতদেহ ভাসায় জলে করোনা ভাইরাস মিশে গেছে, তাই পুরসভার পাইপ-লাইনের জল খাওয়া যাবে না।' এমনই গুজবের কারণে শহরের অনেক মানুষ পাইপ-লাইনের জল খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এই ক'দিনে এতে করে 'কেনা-জল' তথা ব্যবসায়িক জলের চাহিদা বেড়েছে। শহরের অনেকেই পুরসভার জল খাওয়া কিছুদিন বন্ধ রেখেছেন।
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির নবদ্বীপ শাখার সম্পাদক প্রতাপ চন্দ্র দাস বলেন, " গঙ্গার পরিশোধিত জল খেলে কোনো অসুবিধা নেই। তার প্রধান দুটি কারণ হলো - ১) গঙ্গার জলে যতই জীবাণু থাকুক বা গঙ্গার জল যতই দূষিত হোক না কেন তা ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে তথা বৈজ্ঞানিক কতকগুলি পদ্ধতির মাধ্যমে জীবাণু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করে পরিশুদ্ধ করা হয়। ২) দেড় হাজার কিলোমিটার দূরত্বে গঙ্গায় ফেলা দেওয়া মৃতদেহ থেকে কখনোই করোনা ছড়ায় না। মৃতদেহ জলে পচে গেলেও তার দূষণ দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে নবদ্বীপ শহরে এসে পৌঁছানো কোনোমতেই সম্ভব নয়। "
প্রতাপবাবু আরও জানান, " যেহেতু গঙ্গার জল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিশোধন করেই বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ করা হয় সেহেতু অহেতুক জল খাওয়া বন্ধ করবেন না। তাই উত্তর প্রদেশ বা বিহার থেকে কোভিড ভাইরাস গঙ্গার জলে ভেসে ভেসে আপনার খাবার গ্লাসে চলে আসার গল্পটা পুরোপুরি গুজব। গুজবে একদম কান দেবেন না ৷ সর্বদা মনে রাখবেন গুজব ছড়ানো একটি অপরাধ এবং নিজের যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে বিচার করুন, ভাবুন। অন্যের উড়ো কথায় কান দেওয়া বা যাচাই না করেই গুজবটাকে বিশ্বাস করাও বিপজ্জনক। ভারতীয় সংবিধানের ৫০৫(১) দন্ডবিধিতে বলা আছে, গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ালে জনগণের মধ্যে ভয় ও আতঙ্কের সৃষ্টি করলে যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের তিন বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানা হতে পারে। "
বর্তমান এই করোনা অতিমারির পরিস্থিতিতে সঠিক তথ্য দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই যুক্তিবাদী সমিতি সকলের কাছে অনুরোধ করেছেন , আপনার পাড়া প্রতিবেশির মধ্যে এমন গুজব বা মিথ্যা প্রচার ছড়াবেন না। অযথা গুজব ছড়িয়ে আপনার ও আপনার প্রতিবেশির বিড়ম্বনা বাড়াবেন না, তাদের এবং নিজের স্বাভাবিক জীবন যাপন বিপর্যস্ত করে তুলবেন না। আপনারা নিশ্চিন্তে পৌরসভার পরিশোধিত জল খেতে পারেন। সেরকম ভয়ের কিছু থাকলে প্রশাসন থেকেই তা সকলকে জানানো হবে। অযথা শহরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আসুন, শহরে ছড়িয়ে পড়া গুজবের বিরুদ্ধে আমরা সচেতন হই এবং অপরকে সচেতন করার চেষ্টা করি।
No comments:
Post a Comment