তোদের অভাব অনুভব করি
সুচন্দনা ঘোষ
(শিক্ষিকা, কেমিয়া গরীবপুর এফ পি স্কুল, গাইঘাটা উত্তর ২৪ পরগনা)
আমি একজন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার, গাইঘাটা চক্রের প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা। এই করোনা পরিস্থিতিতে বাড়িতেই থাকি। স্কুলে মাসে দু-তিন দিন মিড ডে মিল সংক্রান্ত কাজে গেলেই হয়। কিন্তু সে দু-তিন দিনও খুব যে ভালো লাগে টা নয়। কারণ, মিড ডে মিল যাদের জন্য তাঁদের সঙ্গে আর দেখা টুকুও হয় না। হয়তো কেউ এদিক ওদিক থেকে ডেকে ওঠে ‘ম্যাম…’।
কিন্তু সময় তো আর কাটছেনা। বাড়িতে আছি সব্বার সাথেই, কিন্তু সে আনন্দ আর পাচ্ছিনা। তাই, সেইভাবে সময় কাটাতে পারছি না। আশা করছিলাম দুর্গা পুজোর পর থেকেই করোনা অবস্থার অবনতি ঘটবে। আর আশা ছিল খুব তাড়াতাড়ি পারবো আবার তাঁদের মধ্যে হাজির হতে। কারণ তাঁদের কে যে বড় ‘মিস’ করছি। এই ‘মিস’ তখন বুঝিনি, যখন সেই ছোট্ট মেয়েটি যে আমার কাছে এসে তার ছোট্ট হাত দুটি দিয়ে আমার মুখখানা ধরে চুমু খেয়ে বলেছিলো ম্যাম তুমি আমার মায়ের মতন।
সেদিন সত্যি তেমন করে ভাবিনি, এই স্মৃতি একদিন কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। আবার, মিস করছি তাদের সেই আনন্দের চিৎকার, তখন হয়তো একটু বিরক্ত সুরেই বলেছি, “চুপ থাকতে পারিসনা! এত কেন কথা বলিস। দেখছিস না! ক্লাস নিচ্ছি।“ হয়তো সে সময় কিছুক্ষণের জন্য চুপ করত, কিন্তু আবার সেই। এমনও হয়েছে, আবার একটু বকা দিতে পারি, এই না ভেবে তারা এমন একটা মুখের ভাব করে বলল, “ম্যাম বকবে?” সে বকবো কি, হেসেই গরাগরি। আবার য্খন বলতাম যাও খেয়ে নাও, কিন্তু খাবে কি? তখন তাদের পাশে দাড়িয়ে থাকতে হবে। নাহলে নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল শুরু করবে পাখার নিচে বসা নিয়ে। যাইহোক, সেই আবদার টা এখন কানে বাজে, ও- ম্যাম আজকে তুমি ঠিক করে দাও কে কে বসবো পাখার নিচে, ফ্যানতো একটার কারনেই বছরভর তাদের ভাগ করে বসাতে হবে। আজকে একদল কালকে অন্যদল।
খাওয়া শেষ না হতেই কোনক্রমে হাত মুখ ধুয়ে, সেই ভিজে হাতেই আবদার, “ও ম্যাম! তুমি আমাদের দলে ভাগ করে দাও। গোল্লাছুট খেলব। এরমধ্যেই কয়েক জন আমার বলে উঠল, যাও ম্যাম! তুমি টিফিন করে নাও। তারপর আমরা খেলবো। সেই ফাঁকেই একটা চেয়ারে বসে হয়তো সদ্য টিফিন বাক্সটা খুলেছি, অমনি দরজা বা জানলা দিয়ে আমার শিক্ষার্থীরা উঁকিঝুকি মেরে দেখছে, খাওয়া শুরু করলাম কিনা? কিছুক্ষণ পরেই খুশ খুশ শুনতে পাচ্ছি, একজন শিক্ষার্থী আর একজন শিক্ষার্থীর কাছে জিজ্ঞেস করছে, খাওয়া শেষ হল? দেখ দেখ।
ঐটুকু টুকু ছোট ছোট মানুষ গুলো কিভাবে আমাদের ভালোবাসায় বেঁধে ফেলে, আমরা শিক্ষক শিক্ষিকারা আজ অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করছি। ম্যাম খাওয়া শেষ করে খেলার মাঠে যাবে, তাই ওরা ম্যামের বসার চেযার নিয়ে রেডি করে রেখেছে, ওরা যতক্ষণ খেলবে ম্যামের ওখানেই বসে থাকতে হবে, ওদের এই দাবি গুলো আজ কোন ভাবেই খুঁজে পাই না। সত্যি তোদের হৈচৈ, আবদার মিস করি।
Sundor
ReplyDelete