অর্ধাহারে জীবন্ত দশভূজা কল্যাণী, সঙ্গে তার তিন ভাই-বোন
রঞ্জিত ঘোষ,বাঁকুড়া, 20 মে :
বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতিতে যখন চারিদিকে বেসামাল অবস্থা তখন দিনান্তে নাম মাত্র খেয়েই দিন কাটছে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটির বিসিন্দা গ্রামের চার অনাথ ভাইবোনের। যখন বিভিন্ন প্রকল্পগত দক্ষতা ,নারীক্ষমতায়ন,জনজাতিদের উন্নতি,ভাতা বন্টন, স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি পরিচ্ছন্ন অডিট, ১০০ দিনের কাজ সহ নানান কাজের ভিত্তিতে সারা দেশে সুনাম কুড়িয়েছে বাঁকুড়া জেলা পরিষদ । আর তখনই এর উল্টো দিকে এক চরম অন্ধকারময় দারিদ্র -অসহায়তার চিত্র ধরা পড়ল বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটির বিসিন্দা গ্রামে । গ্রামেরই শেষ প্রান্তে বসবাস করতেন নন্দ বাউরী এবং তার স্ত্রী পুতুল বাউরীসহ তাদের চার সন্তান । দিনমজুরের কাজ করে অভাব-অনটনের সঙ্গে চরম লড়াই করে পরিবারের অন্ন সংস্থান করতেন বাবা নন্দ বাউরী । কিন্তু বিধির নির্মমতা তাদের দাঁড় করালো আরো এক চরম সঙ্কটের মধ্যে ।
যথাক্রমে গত তিন ও দুই বছরে মারন রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ হারান নন্দ বাউরী ও তার স্ত্রী পুতুল বাউরী । অনাথ হয়ে পড়ে তাদের চার সন্তান । এখন তারা প্রথম, তৃতীয়, চতুর্থ এবং বড়ো মেয়ে কল্যাণী ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে । স্বভাবতই বালিকা হয়েই জীবন্ত দশভূজার মতো সংসারের হাল টানতে হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী তথা ঁনন্দ বাবুর বড় মেয়ে কল্যানীকে । যে বয়সে কচি কোমল হাত কলমের নানা রঙের কালি দিয়ে খাতার পাতা ভর্তি করে আজ সেই হাত দুটিই তুলে নিয়েছে সংসারের হাল। কারণ যেভাবেই হোক দু'বেলা দু'মুঠো অন্ন জোগাড় করে রেঁধে বেড়ে ছোট ছোট ভাইবোনদের মুখে খাবার তুলে দিতে হবে যে । স্কুল সচলকালীন সময়ে স্কুলে যেতে ভালোও লগত তাদের ,নামও আছে ষষ্ঠ শ্রেণীর খাতায় । কিন্তু স্কুলে যাওয়ার প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠেছে দারিদ্রতা । করোনা ভাইরাসের কারণে অনেকেই যখন অনলাইনে পড়াশোনায় ব্যস্ত তখন তার কচি হাত দুটি ঘুটে দিতে, বাসন মাঝ্তে ব্যস্ত । কল্যাণীদের কাছে স্মার্টফোনে অনলাইনে ক্লাস করা যেন এক বড়ই বিলাসিতা তা যেন কল্পনাতিত। তাদের মাটির বাড়ি ভাঙাচোরা টালির ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো ও আকাশের বৃষ্টির অবাধ যাতাযাত । প্রতিদিন সকাল হলেই বই খাতা ফেলে এক মুঠো অন্ন জোগাড়ে ব্যস্ত তারা। সরকারী সাহায্য বলতে তেমন কিছুই পায়না তারা । রাজ্য সরকারের 'দুয়ারে সরকার' 'দুয়ারে রেশন' প্রকল্প থাকলেও আঁধার কার্ড রেশন কার্ড না থাকায় দুয়ারে আসেনা রেশন।
বর্তমানে কাকা-কাকীমার তত্বাবধানে থাকলেও, মেজিয়ার আশার আলো চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের মতো বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের খাদ্যদ্রব্য প্রদানের মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
সরকারি সুযোগ-সুবিধা সহ ভাইবোনেরা যাতে লেখাপড়া করতে পারে তার জন্য সরকারের কাছে আর্জি জানান ছোট্ট কল্যাণী বাউরী।
এ বিষয়ে গঙ্গাজলঘাঁটি পঞ্চায়েত সমিতি এবং শালতোড়ার বিধানসভার বিধায়িকার সাথে যোগযোগ করা হলে, তারা ওই শিশুগুলির সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন ।
No comments:
Post a Comment