Latest Bengali News Portal

Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Saturday, August 7, 2021

২২শে শ্রাবণের স্মৃতি-সন্দীপন ধর

২২শে শ্রাবণের স্মৃতি

সন্দীপন ধর

২২ শ্রাবণ




সেই রাতে কবি নজরুল আকাশবাণীতে মাইক্রোফোনের সামনে হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন! আসছি সেই কথায় একটু পরে। সেদিন ছিল, ৭ অগাস্ট, ১৯৪১ সাল। বাংলার ১৩৪৮ সালের ২২ শে শ্রাবণ। তাই আজ সেই ২২ শে শ্রাবণের কথা।


আমার জীবনে প্রথম সেইভাবে শান্তিনিকেতন ভ্রমণ ১৯৭৬ সালে। স্কুল থেকে বেড়াতে নিয়ে গেছিলো শান্তিনিকেতন।

তখন আমি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। স্কুলের বাংলার শিক্ষক নস্কর স্যার ছিলেন ট্যুরের প্রধান দায়িত্বে। নস্কর স্যার আমাকে খুব ভালবাসতেন। আশ্রমের পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্যার বলে চলেছেন, ঐ দেখো! ছাতিমতলা...মহর্ষির উপাসন স্থল... ঐ দেখো গৌরপ্রাঙ্গন...কলাভবন... রামকিঙ্কর বেইজের কর্মরতা সাঁওতাল রমণী... ঐ দেখো কবির বাড়ি উদয়ন... এক এক করে সব যেন সিনেমার দৃশ্যের মত ভেসে চলেছে!

আমি কবির প্রেমে পড়ে গেলাম।

কত মধুর স্মৃতি ছড়ানো আছে আমার , আশ্রমের দেবদারু গাছের ছাযায় ছায়ায়, সেই বছরের বাইশে শ্রাবণ। এবার বেলা শেষের গান।

রাখী পূর্ণিমার মধ্যাহ্নে আমার ভালবাসার মানুষটি একদিন চলে গেলেন অস্তাচলে। সকাল থেকেই "শনিবারের চিঠি "- র প্রাণপুরুষ সজনীকান্ত দাশ জোড়াসাঁকোয়। ফুল দিয়ে খাট সাজানো থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থা একাই তিনি করছেন। সজনীকান্তই প্রথম আকাশবানীতে কবির মৃত্যু সংবাদ ফোন করে জানালেন।


সেদিনের ঘটনার আর এক প্রত্যক্ষদর্শী, আশ্রমকন্যা রাণী চন্দের বই " "গুরুদেব" থেকে তুলে ধরছি,


..."গুরুদেবকে সাদা-বেনারসী-জোড় পরানো হল। কোঁচানো ধুতি, গরদের পাঞ্জাবি, পাট করা চাদর গলার নীচ থেকে পা পর্যন্ত ঝোলানো,কপালে চন্দন, গলায় গোড়ের মালা,দু পাশে রাশি রাশি শ্বেতকমল রজনীগন্ধা। বুকের উপরে রাখা হাতের মাঝে একটি পদ্মকোরক ধরিয়ে দিলাম; দেখে মনে হতে লাগল যেন রাজবেশে রাজা ঘুমোচ্ছেন রাজশয্যার উপরে।

...তিনটে বাজতে হঠাৎ একসময়ে গুরুদেবকে সবাই মিলে নীচে নিয়ে গেল।

...দেখলাম জনসমুদ্রের উপর দিয়ে যেন একখানা ফুলের নৌকা নিমেষে দৃষ্টির বাইরে চলে গেল।"


নলিনীকান্ত সরকার স্টেশন ডিরেক্টরকে নির্দেশ দিলেন কবির শেষযাত্রার যাবতীয় ব্রডকাস্টিং এর ব্যবস্থা করতে।

সেই প্রথম বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র আকাশবানী থেকে রবীন্দ্রনাথের শেষযাত্রার ধারাবিবরণী দিলেন।

"আকাশবাণী" নামটা তো কবিই দিয়ে ছিলেন।

নিমতলা শ্মশানে একটা মই দিয়ে একটা বাড়ির ছাদের আলসেতে দাঁড়িয়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র অশ্রুভরা কণ্ঠে ধারাবিবরণী দিয়ে চলেছেেন,

রবি এখন চিরকালের জন্যে অস্তাচলে চলে গেলেন। চিতার শেষ আগুন নিভে গেল! 

এদিকে আকাশবাণীতে তখন কর্মরত রবি অনুরাগী কবি নজরুল কাঁদছেন।

লিখে ফেললেন "রবিহারা " কবিতা।

নজরুল রাতে আকাশবাণী থেকে সেই কবিতা নিজের কণ্ঠে পড়লেন,

" ঘুমাইতে দাও শান্ত রবিরে / জাগায়ো না জাগায়ো না /সারাজীবন যে আলো দিল/ ডেকে তারে ঘুম ভাঙায়ো না।"


কবিতা পড়ে নজরুল হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন। শেষ হলো সেদিনের বাইশে শ্রাবণের কথা। কবির প্রয়াণ দিবসে আমার গভীর শ্রদ্ধা রইল।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages